সেবা রপ্তানিতে ধীরগতি

সুখবর দিয়ে গত অর্থবছর শেষ করলেও চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে সেবা রপ্তানি।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2019, 02:18 PM
Updated : 3 Oct 2019, 02:18 PM

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৫৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার আয় করেছে।

রপ্তানির এই পরিমাণ গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি হলও লক্ষ্যের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।

জুলাই মাসে সেবা রপ্তানি করে ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। গত বছরের জুলাই মাসে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ৫১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

তিন মাস হলো অর্থবছর শুরু হলেও বৃহস্পতিবার প্রথম মাসের সেবা খাতের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে ইপিবি।

পণ্য রপ্তানির মতো সেবা রপ্তানিতেও বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬৩৫ কোটি (৬.৩৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে।

ওই অংক ছিল ২০১ ৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল প্রায় ২৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় সেবা খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

“বাংলাদেশের সেবা খাতের রপ্তানি সম্প্রতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ সুবিধা প্রাপ্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেছেন, “গত অর্থবছরে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পণ্য এবং সেবা দুক্ষেত্রেই আমরা ভালো করেছি। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”

“২০২১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা আমরা ধরেছি সেটা অর্জিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৬২২ কোটি ১৯ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে।

বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।

কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।

দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা-কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ২২ কোটি ডলার।

অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে অন্যান্য ব্যবসায় সেবা থেকে এসেছে ৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

আর্থিক সেবা খাত থেকে ৯৬ লাখ ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

নির্মাণ সেবা থেকে এসেছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ চার হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

পণ্য ও সেবা খাত মিলে গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৭ কোটি ৩৫ লাখ (৪৬.৮৭ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি (৩৯ বিলিয়ন) ডলার।আর সেবা রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার।

দুইটা মিলিয়ে মোট লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাত মিলিয়ে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। আর সেবা রপ্তানি থেকে ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।