প্রণোদনায় বাড়ছে রেমিটেন্স, তিন মাসে প্রবৃদ্ধি ১৬.৫৮%

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সুবাতাস বইছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2019, 01:04 PM
Updated : 1 Oct 2019, 01:05 PM

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। আর সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ।

প্রতি বছর দুই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। অগাস্টে কোরবানির ঈদের পর ধারনা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি।

সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। যা মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।

এর আগে গত মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা।যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল জুলাই মাসে; ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে। সাধারণত ঈদের পর প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠান। কিন্তু এবার দুই ঈদের পরও রেমিটেন্স বেড়েছে।

“এটা খুই ভালো খবর।প্রণোদনা দেওয়ার কারণেও রেমিটেন্স বাড়ছে।এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে।সে সব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন; বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।”

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার রেমিটেন্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৪ লাখ (৪.৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে।

গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসেছিল ৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ (৩.৮৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবেই এই তিন মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাবেন।

বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ অগাস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।

তবে রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে।আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স।

বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।

স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিটেন্স বাড়ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা।

রিজার্ভ ৩১.৮৫ বিলিয়ন ডলার

রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুন-জুলাই মেয়াদের ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।