‘নিচের লেভেলে’ সমঝোতা করে ট্যাক্স কম দেয়: এনবিআর চেয়ারম্যান

সম্পদশালীদের কর ফাঁকি দেওয়ার কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেছেন, তারা যখনই কারও ট্যাক্স ধার্য করেন তখন ‘নিচের লেভেলে’ গিয়ে সমঝোতা করে ট্যাক্স কম দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 03:23 PM
Updated : 22 Sept 2019, 03:23 PM

এর মধ্য দিয়ে এনবিআর কর্মীদের ট্যাক্স ফাঁকিতে সহায়তার কথা স্বীকার করলেন চেয়ারম্যান।

রোববার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ‘আয়কর আহরণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে এনবিআরের কর অঞ্চল-৪ চট্টগ্রাম।

আলোচনায় সম্পদশালীদের কর ফাঁকি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক অনুপম সেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আজকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। অসাম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিশাল বিশাল ধনী হচ্ছে, একাত্তরের পরে। ক্যাপিটালের এটা ধর্ম, হবেই। কিন্তু যাদের কোটি কোটি টাকা তারা খেলাপি হচ্ছেন, ফাঁকি দেন। সম্পদ পুঞ্জিভূত হচ্ছে।

“দেশে যাদের টাকা আছে তারা বেশি ট্যাক্স দেন না। আমরা যারা চাকরিজীবী তারা ট্যাক্স দিই।”

এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই সমাজ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকেও বলব, আপনারা প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন বন্ধ করে দিয়েছেন কেন? উপরের দিকে বাড়তি হারে ট্যাক্স নেন না কেন? যদি কারও বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকা হয় তাহলে তাকে ৭৫ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। উন্নত দেশে এ রকম হয়।”

তার এই বক্তব্যে জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা যখনই কারও ট্যাক্স ধার্য করি সেটা নিয়ে তারা নিচের লেভেলে গিয়ে সমঝোতা করে ফেলে। সমঝোতা করে কম দেয়।

“বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিট প্রফিট যেটা সেটা ট্যাক্সেবল। উনারা সবাই কিছু দিন আগে এসেছিলেন। উনারা প্রফিটটা আরও বেশি নিতে চান, কিন্তু ট্যাক্স দিতে চান না।”

ট্যাক্স দিতে নাগরিকদের অনীহার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এখনও মানুষকে বুঝিয়ে উঠতে পারছি না সরকারের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ কত কিছু ভোগ করছেন। তাহলে কেন সরকারকে ট্যাক্স দিব না? ট্যাক্স দেওয়াটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

“বাংলাদেশে কমপক্ষে চার কোটি মানুষের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু মাত্র ২০ লাখ লোক রিটার্ন জমা দেন। তার মধ্যে মার্জিনাল ট্যাক্স পেয়ার ৬০ শতাংশ।”

সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “আমাদের ট্যাক্স ও জিডিপি রেশিও কাছাকাছি দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। আমাদের দেশে ব্যক্তি যতোটা ধনী, রাষ্ট্র ততোটা নয়। জিডিপির যে আকার সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমাইল খান বলেন, “আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু বিকাশ ও রূপান্তর যদি না ঘটে তবে সন্তুষ্ট হওয়ার অবকাশ নেই। একবিংশ শতাব্দীতে কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। সামগ্রিক উন্নয়নে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।”

সিভাসু উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, “ট্যাক্স দেওয়ার প্রতি সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তবে ভয় এখনও আছে। ভয়ে অনেকে আপনাদের কাছে না গিয়ে সাদা টাকাও কালো করে ফেলেন। মানুষের কাছে যান। বড় চিঠি দিবেন না, এটা মানুষ ভয় পায়।”

সভায় বক্তব্য রাখেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মু সিকান্দার খান, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী, পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নুরুল আনোয়ার, এনবিআর সদস্য রওশন আরা আক্তার ও সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।