মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, “খেলাপী ঋণ নিয়ে আমাদের যে দুশ্চিন্তা থাকে, সেটা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমরা সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছি যে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসব।”
কী পরিবর্তন আনা হবে তার ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ দেওয়ার সময় আদায় নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত মর্টগেজের আওতায় থাকতে হবে।
“এর বাইরে যারা (ঋণগ্রহিতা কোম্পানির) পরিচালক, চেয়ারম্যান, তারা সবাই পারসোনাল গ্যারান্টি দেবে। এই সমস্ত গ্যারান্টিগুলো আমাদের আইনি প্রক্রিয়ায় এতটা শক্তিশালী হবে যে, কেউ যদি ফেইল করে ঋণ শোধে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নিতে পারব।”
ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ এবং গ্যারান্টি- এ দুটো বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে কোনো ঋণ আর খেলাপি হবে না বলে অর্থমন্ত্রীর বিশ্বাস।
“আমরা দেখেছি, আমাদের নন পারফরমিং লোনগুলো মোস্টলি হয়েছে… আমাদের আইনি প্রক্রিয়ায় কিছু দুর্বলতা ছিল, যে কারণে আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে… আমরা ইগনোর করতে পারি না। যে কভারেজ ছিল, সেগুলা আমরা ব্যবহার করতে পারি না। এগুলো আমরা দূর করব।”
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আর জুন শেষে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গত বছরের জুন পর্যন্ত অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলোকে লাভজনক করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব ব্যাংকের একই জায়গায় একাধিক শাখা আছে, সেগুলোকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায় কিনা- তা ভেবে দেখা হবে।
“সরকারি ব্যাংকগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে ঠিক আছে, কিন্তু আন্ডার কাট করে একজনের কাস্টমার অন্যজন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। যদি এটা হয়, তাহলে আমরা যে মার্কেটে একটা হেলদি কম্পিটিশন চাচ্ছি, সেটা হবে না, বরং উল্টোটা হতে পারে।“
মন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ে তিন মাস পর পর বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। সেখানে ব্যাংকগুলো নিজেরাই তাদের ‘পারফরমেন্সের’ মূল্যায়ন করবে।
পাশাপাশি ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল অডিট ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে চারটি ব্যাংকের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, যেখানে নতুন আইন করা দরকার সেখানে নতুন আইন হবে। যেসব ব্যাংকে ‘অযৌক্তিক’ পরিমাণ বোনাসের ব্যবস্থা রয়েছে, প্রয়োজনে তা বাদ দিতেও নতুন আইন করা হবে।
“কে কতটা বোনাস নেবে, কিসের ভিত্তিতে বোনাস নেবে… সেই ইনডিকেটর বসিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এই কাজগুলোই করছি। এই কাজগুলো আগে করার সুযোগ পাইনি।”
মুস্তফা কামাল বলেন, “বৈঠকে এসব সিদ্ধান্তসহ আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করলে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে আর কষ্ট পেতে হবে না।”