উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন

এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিতে নতুন নীতিমালার খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2019, 11:46 AM
Updated : 9 Sept 2019, 11:46 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯’ অনুমোদন পায়।

পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

এসএমই খাতের জন্য ২০০৫ সালে একটি কৌশল প্রণয়ন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবারই প্রথম নীতিমালা হলো। এই নীতিমালা ২০১৯-২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

“জাতীয় শিল্পনীতির আলোকে এই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এই খাতে প্রায় ৭৮ লাখ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। জিডিপিতে এই খাতের অবদান হলো প্রায় ২৫ শতাংশ।”

এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ, বাজারে প্রবেশের সুযোগ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ, ব্যবসায় সহযোগিতা এবং তথ্যের সুযোগ প্রাপ্তি এ ছয়টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নীতিমালা করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

নীতিমালার বাস্তবায়ন কৌশলে বিষয়ে শফিউল বলেন, “কৌশলগত অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তিতে এসএমই খাতের সুযোগ বৃদ্ধি করা, এসএমই খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা, অর্থায়নের ব্যবস্থা করা। এসএমই ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড চালু করা। এই ফান্ড চালু হলে মর্টগেজ থাকবে, না অর্থ প্রাপ্তি সহজ হবে। সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের কথা বলা হয়েছে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নীতিমালায় ই-কমার্স, অনলাইন সাপোর্ট, আউট সোর্সিং ও আইটি ভিত্তিক এপ্লিকেশনের মাধ্যমে এসএমইদের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঋণ দেওয়া, তহবিল গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্বুব্ধকরণ এবং বাজার সংযোগে সুযোগ বৃদ্ধি করার কথাও বলা হয়েছে।

টেকসই করার জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।

এসএমই তথ্য ভাণ্ডার তৈরি, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠায় এসএমইদের উৎসাহিতকরণ, শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসএমইদের প্রণোদনা দেওয়া, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এসব নীতি-কৌশল বাস্তবায়নের জন্য দুই ধরণের পর্ষদ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩৭ জনের পর্ষদে প্রতিমন্ত্রী সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বেসরকারিখাতের পাঁচজন প্রতিনিধি থাকবেন। আর সচিবের নেতৃত্বে পর্ষদে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২৯ জন সদস্য থাকবেন।“

নীতিমালা অনুযায়ী কি ধরনের সুবিধা উদ্যোক্তারা পাবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ডিটেইল নেই, নীতিমালায় শুধু গাইড লাইন বলে দেওয়া থাকে বাকিটুকু করবে সরকার।”

সংবাদ সম্মেলনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে এসএমই উদ্যোক্তারা এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ব্যাংক থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারে (১০ এর নীচে) ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পায়।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩৬টি অ্যাকটিভিটিজ ও ৬২টি কৌশল আছে। সময়াবদ্ধ কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী বলে দেওয়া রয়েছে কী কী অর্জন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালে এসএমই খাতে জিডিপিতে অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মূলধন বৃদ্ধি করে আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন আইন অনুমোদন

সভায় ‘বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন আইন, ২০১৯’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,“আইনটি অনেক পুরনো, পাকিস্তান আমলে থেকে ইস্ট পাকিস্তান ল হয়ে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত আছে। ১৯৭২ সালে প্রেডিডেনশিয়াল অর্ডার হয় বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অর্ডার, এর পর দুই অ্যামেন্ডমেন্ট হয় ১৯৭৬ ও ৭৯ অর্ডিন্যান্স আকারে, যেহেতু এগুলো  সামরিক আমলে হওয়া তাই এগুলোকে আপডেট করে বাংলায় করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।”

আগের যে ১৯৭২ সালের যে প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার তার সাথে প্রস্তাবিত আইনের খুব বেশী ব্যবধান নেই জানিয়ে

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তা হল, অনুমোদিত মূলধন আগে ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা , পেইড আপ ক্যাপিটাল সম্পর্কে বলা হয়েছে সরকার কর্তৃক সময় সময় যা জোগান দেওয়া হবে তা। এখন সেই পর্যায়ে এটা বাড়তে বাড়তে ৪৫ কোটিতে  এসে ঠেকেছে। এখন বলা হচ্ছে কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা এবং পেইড আপ ক্যাপিটালের ব্যাপারে বলা আছে সরকার জোগান দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা উন্নত করবে।”

পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ আগের মতই সরকার দেবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিষদের গঠন ছিল একজন চেয়ারম্যান ৪ জন পরিচালক নিয়ে, এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন পরিচালকের সাথে আরেকজন খন্ডকালীন পরিচালক যুক্ত হবে যিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হবেন।

আইনে বার্ষিক প্রতিবেদনের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,পরবর্তী অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই তা শেষ করতে হবে। অর্থাৎ জুলাইতে আমাদের অর্থবছর শেষ হয় আগামী ডিসেম্বর এর মধ্যেই বার্ষিক রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।

কর্পোরেশনের পাওনা আদায়ে নতুন ম্যানেজমেন্ট দেওয়া হয়েছে আগে কোন সুনিদ্রিস্ট বিধান ছিল না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কর্পোরেশনের কোন পাওনা থাকলে সেটা ১৯১৩ সালের পিডআর অ্যাক্ট অনুযায়ী আদায় যোগ্য হবে।”   

প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বর জাতীয় বস্ত্র দিবস

প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উদযাপনের জন্য সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারিকৃত এ বিষয়ক পরিপত্রের ‘খ’ ক্রমিকে অন্তভূক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক

বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,‘সভার শুরুতে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে।’

গত শুক্রবার ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন নঈম চৌধুরী।