সিদ্ধিরগঞ্জের বিদ্যুৎ এ মাসেই গ্রিডে

নির্মাণ শুরুর প্রায় আট বছর পর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন সাইকেল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 03:46 PM
Updated : 11 Nov 2019, 03:44 PM

বর্তমানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে থাকা কেন্দ্রটি থেকে চলতি মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ- ইজিসিবি।

অবশ্য গতবছরের মে মাস থেকেই এই কেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দিতে শুরু করেছে ইজিসিবি। চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ দুই টাকা ৩২ পয়সায় পাবে বিপিডিবি।

২০০৭ সালে একনেক সভায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অনুমোদন পেয়েছিল। পরে কয়েকদফা পরিবর্তন ও সংশোধনের পর ২০১২ সালে স্পেনের আইসোলাক্স ইঞ্জিনিরিয়া এসএ অ্যান্ড স্যামসাং সি অ্যান্ড টি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেখভালে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- বিপিডিবির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইজিসিবিকে।

প্রথমে গ্যাস টারবাইন চালিত সিঙ্গেল সাইকেল নকশায় নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এক পর্যায়ে তাতে পরিবর্তন করে কম্বাইন সাইকেল করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

নানা জটিলতায় বার বার নির্মাণকাজ পিছিয়ে যাওয়া এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে মূল্যয়ন করেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি)।

বিশ্বের সর্বাধুনিক কম্বাইন সাইকেল প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা অন্যান্য কেন্দ্রগুলোর চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিজিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইসোলাক্স নিজেদের অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে তিন বছরের মাথায় কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে এককভাবে স্যামসাং সি অ্যান্ড টি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

শনিবার নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এ সময় তিনি বলেন, ২০১৫ সালের দিকে ইউরোপে মন্দা পরিস্থিতির কারণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইসোলাক্স সঙ্কটে পড়েছিল। এক পর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে আরও দুই বছর সময় লেগে যায়।

নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে অত্যন্ত দক্ষতা সম্পন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি দেশের সর্বাধুনিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। ব্যয়বহুল হলেও এটি অনেক বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী। বর্তমানে গ্যাসের যে চাপ রয়েছে তা ধরে রাখতে পারলে খুব সাশ্রয়ী মূল্যে এই পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।”

ইজিসিবি জানিয়েছে, কেন্দ্রটির গ্যাস টারবাইন থেকে ২১৮ মেগাওয়াট এবং স্টিম টারবাইন থেকে ১১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।

তবে শনিবার পরীক্ষামূলক সময়ে গ্যাস টারবাইন থেকে ২২৮ মেগাওয়াট ও স্টিম টারবাইন থেকে ১২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল।

শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

পিজিসিবির নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুলআলম বলেন, ২৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বলা হলেও এর গড় উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা বেশি। সিম্পল সাইকেলে উৎপাদন দক্ষতা ৩৫ শতাংশ আর কম্বাইন সাইকেলের উৎপাদন দক্ষতা ৫৫ শতাংশ।

তিন হাজার ৯৭১ দশমিক ২৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের দুই হাজার ৯৪১ দশমিক ৪৮ কেটি টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ৫৪০ দশমিক ৫১ কোটি টাকা রয়েছে। প্রকল্পের বাকি ৪৮৯ দশমিক ৩০ কোটি টাকা দিচ্ছে ইজিসিবি।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। সারাদেশের চাহিদার বিপরীতে দৈনিক উৎপাদন ১৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

বর্তমানে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। এর বাইরে দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কারের জন্য স্থগিত আছে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।