ভাড়া বাড়াতে চান বাস মালিকরা

বাসের ভাড়া বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএতে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2019, 07:14 PM
Updated : 28 August 2019, 07:14 PM

যুক্তি হিসেবে মালিক সমিতি বলছে, গত কয়েক বছরে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও বাসের ভাড়া বাড়েনি।

বিআরটিএ বলছে, তারা বাজার পর্যালোচনা করবেন। যদি মনে হয়, গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে, তাহলে তারা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন।

সিএনজি ও ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানিয়ে গত ৬ জুলাই বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ স্বাক্ষতির চিঠিতে বলা হয়, এ বছরের ১ জুলাই থেকে সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হয়। এ কারণে যানবাহনের পরিচালনা ব্যয় সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ৪০ শতাংশ সিএনজিতে চলে। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া সবশেষ ২০১৫ সালে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া গত ৪ বছর ধরে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়নি।

চিঠিতে বলা হয়, “বিগত অর্থ বছরগুলোর বাজেটে গাড়ির টায়ার-টিউব,খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক বহুগুণ বেড়েছে, এতে গাড়ির পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। এ কারণে সারাদেশের পরিবহন মালিকরা ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”

যানবাহনের অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করে ঢাকাসহ সারাদেশের সিএনজি ও ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

এ বিষয়ে এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত পাঁচ বছরে সবকিছুর দাম বেড়েছে; গ্যাস, গাড়ির টায়ার-টিউবসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়নি।

“কথা ছিল, প্রতি বছর এ সবের দামের সঙ্গে মিলিয়ে ভাড়া সমন্বয় করা। কিন্তু সমন্বয় করা হয়নি, বাস ভাড়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

‘তো এটা কি সমন্বয় হওয়া উচিত না?” প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, “আমরা সেখানে পার্টিকুলার কোনোকিছু দাবি করি নাই। আমরা বলেছি কস্টিং কমিটির মাধ্যমে যা কস্টিং আসে, সেইটা করুক।”

বাস মালিকদের আবেদনে গত ২৬ অগাস্ট বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন কর্মকর্তারা। সেখানে বাজার যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান।

তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

“তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। আমরা আগে দেখব, তারা যে দাবি করছেন, তা যৌক্তিক কি না। মিটিংয়ে আমরা তাদের বলেছি বাজারে একটা টিম পাঠাতে। আমরাও একটা টিম পাঠাব বাজার যাচাই করতে। যাচাইয়ের পর মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”

“যদি মনে হয় যে ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন আছে, সেটাও আমরা মন্ত্রণালয়কে জানাব। যদি মনে হয় ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন নেই সেটাও জানাব,” বলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

ফাইল ছবি

২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। সে সময় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বাসের ৭ টাকা এবং মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ডিটিসিএর আওতাধীন এলাকা নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন রুটের জন্য এই ভাড়া কার্যকর।

তার আগে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১৫ পয়সা বাড়িয়ে ১ টাকা ৩৫ পয়সা করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া আবার ১০ পয়সা করে বাড়ানো হয়। ফলে ভাড়া দাঁড়িয়েছিল ১ টাকা ৪৫ পয়সা।

ডিজেলের দাম কমায় ২০১৬ সালের ৩ মে দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৩ পয়সা কমানো হয়। ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা।