চামড়া নিয়ে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে রোববার এই খাত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বৈঠকে এই হিসাব দেওয়া হয় বলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ছিলেন।
বরাবরের মতো এবারও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সরকারের পক্ষে থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মাঠের চিত্র ছিল ভিন্ন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন কিংবা ফেলে দেন।
চট্টগ্রাম, সিলেট, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিনশ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল।
চামড়া নিয়ে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের টানাপড়েনে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন বলেন, “আমরা হিসাব করে দেখলাম, প্রতি বছর ৫ হাজার চামড়া নষ্ট হয়, সব সময় এটা হয়ে থাকে।
“দেশের এ আবহাওয়ায় জেলা ওয়ারী হিসাবে ব্যবসায়ীরা দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হতে পারে।”
উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “কোরবানিতে এক কোটি চামড়া হয়; এখানে যারা আছে, তারা বলেছে ১০ হাজার নষ্ট হয়েছে।
“উনারা বলছেন, নরমালি ৫ হাজার নষ্ট হয়ই। এ বছর একটু বেশি হয়েছে। মেইন কারণ ওয়েদার, বেশি গরমের জন্য। চট্টগ্রাম ও সিলেটে একটু বেশি হয়েছে, ঢাকায় হয়নি। ন্যাশনাল অ্যাভারেজে ১০ হাজারের বেশি হয়নি।”
বাংলাদেশে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করতে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার যে চাহিদা, তার বড় অংশই মেটে ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশু থেকে।
কোরবানির পশুর চামড়া মূলত কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া যায় আড়তগুলোতে। সেখান থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা।
এবার কাঁচা চামড়ার দর দেখে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শুধু চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে যান। দিনাজপুর, শেরপুরেও অনেক চামড়া এভাবে ফেলে দেওয়া হয়।
৩০ ট্রাক চামড়া ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসার কথা জানানো হলে শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন বলেন, “বিএনপি কিনে ফেলাইয়া দিছে, এ মুহূর্তে আমার আর বলার কিছু নেই।”
তিনি আরও বলেন, “চামড়া শিল্পের অগ্রযাত্রা সীমিত করার জন্য আমার মনে হয় একটি চক্র কাজ করছে।”
চট্টগ্রামে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের ফেলে যাওয়া লাখ খানেক চামড়া পুঁতে ফেলে সিটি করপোরেশন
এবার চামড়ার দরপতনের পেছনে কারসাজি ছিল বলে দাবি তোলে বিএনপি। তারা বলছে, দেশের শিল্প ধ্বংসের উদ্দেশ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতেই এই কারসাজি করা হয়েছে।
চামড়া দরপতনের পেছনে কোনো ‘সিন্ডিকেট’ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন।
এবার চামড়ার দরপতনে কাঁচা চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; যদিও তার বিরোধিতা ছিল ট্যানারি মালিকদের।
এরপর সরকারের অনুরোধে ট্যানারি মালিকরা শনিবার থেকে কাঁচা চামড়া কেনার উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায় আড়তদারদের পদক্ষপে। তারা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়া পর্যন্ত কাঁচা চামড়া বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে সঙ্কটের সমাধানে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিল্পমন্ত্রী ও উপদেষ্টা।
কোরবানির ঈদের পর যে কর্মব্যস্ততা থাকার কথা, তা নেই সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে
শিল্পমন্ত্রী বলেন, “চামড়া শিল্পে সমস্যা আপাতত নাই। আগামীতে যে সমস্যাগুলো আছে, তা ২২ তারিখে সমাধান করে দেবে।”
আড়তদাররা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রোববার থেকেই ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত, আজ থেকেই চামড়া বিক্রি শুরু করা হবে।”
ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মাননীয় মন্ত্রী ও উপদেষ্টা মহোদয় এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী ২২ অগাস্ট এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে এ নিয়ে আলোচনা হবে দুই পক্ষের মধ্যে। সেখান থেকেই ফয়সালা করে দেবে।”
কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, অবস্থা বুঝে রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”