জনশুমারির ব্যয় ১০ গুণ বাড়ছে, শুনে প্রশ্ন মন্ত্রীরও

২০১১ সালের জনশুমারিতে সরকারের মোট খরচ হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পর ২০২১ সালে আরেকটি জনশুমারি হবে।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2019, 02:55 PM
Updated : 5 August 2019, 04:21 PM

তা পরিচালনা করতে ‘জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২১’ শীর্ষক যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), তাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ১০ বছর ব্যবধানে একই ধরনের প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছিল ১৫ গুণ।

সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওই ব্যয় প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় তোলা হয়। ওই কমিটি প্রাথমিক বিশ্লেষণে ব্যয়ের প্রস্তাবটি ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে তা ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা কমানোর সুপারিশ করেছে।

অর্থাৎ পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। তাও ২০১১ সালের জনশুমারির ব্যয়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।

এটা শুনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ১০ বছরে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ১০-১৫ গুণ বেড়ে যাওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

প্রকল্প ব্যয় এত বাড়ছে কেন- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রশ্নে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সেন্সাস উইং এর পরিচালক জাহিদুল হক সরদার উত্তর দিতে রাজি হননি।

বিবিএস মহাপরিচালক (ডিজি) কৃঞ্চা গায়েন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তো কী হয়েছে? আমাদের যেটা যৌক্তিক মনে হয়েছে, আমরা তাই করেছি। ১০ বছর আগের দামের সঙ্গে এখন তুলনা করলে তো হবে না।”

“এখন পিইসি সভায় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবেই ব্যয় বিভাজন করা হবে,” বলেন তিনি।

পিইসি প্রকল্পের যে ব্যয় ঠিক করেছে, তার এক হাজার ৮৯৭ কোটি ৬৯ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে, বাকি ৩৭৭ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

পিইসি প্রকল্পটির মূল কাজ জনগণনার ব্যয়ে পরিবর্তন করেনি। এ খাতে এক হাজার ১৪১ কোটি টাকা ব্যয় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

পিইসি সভায় প্রকল্পটির যেসব খাত থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে

>> জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভেন্যু খরচ, মাল্টিমিডিয়া ভাড়া ও যানবাহন ভাড়া বাবদ ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা করা হয়েছে।

>> প্রকল্পটি চলাকালীন বা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে বিজ্ঞাপন ব্যয় ৭৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

>> অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২ কোটি টাকা, তা ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

>> ম্যাপিং খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, তা কমিয়ে ৪০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

>> এছাড়াও টেলেক্স, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট খাতে ব্যয় কমিয়ে ১০ কোটি ৫৫ লাখ করা হয়েছে। মূল প্রস্তাবে এখাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এখাতে আলাদা করে টেলিফোন ব্যয়েও ৮ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকছে।

>> আপ্যায়ন খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, জ্বালানি খরচ, যানবাহন কেনাসহ আরও কয়েকটি খাতেও ব্যয় কামানো হয়েছে। প্রস্তাবে তথ্য সংগ্রহে ৬০০ মোটর সাইকেল, ৫০টি স্কুটি, ১২টি জিপ এবং চারটি মাইক্রোবাস কেনার প্রস্তাব করা হয়।

‘গ্রহণযোগ্য নয়’

এবিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানেন না।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরলে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, একই ধরনের প্রকল্প পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করতে গেলে মূল্যস্ফীতি হিসাব করে নির্ধারণ করা যায়। সে হিসেবে ১০ বছরের ব্যবধানে ১০ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি ধরলেও ওই প্রকল্পটির ব্যয় দ্বিগুণ হতে পারে।

“কিন্তু কোনোভাবেই ১৫ গুণ বা ১০ গুণ কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মান্নান বলেন, “এ ধরনের প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মন্ত্রী হলেও নিজে ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এ ধরনের রেওয়াজ নেই। থাকলে ভালো হত।”

বিবিএস কর্মকর্তা জাহিদুল হক সরদার বলেন, এই প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণ করবে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পিইসি সভায় প্রকল্পটির ব্যয় আরও যাচাইয়ের অবকাশ রাখা হয়েছে।