রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন

গত অর্থবছরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 01:03 PM
Updated : 31 July 2019, 03:09 PM

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এই হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ আয় ১২ মাসের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ কম।

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের সামনে সদ্য বিগত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের যে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, তাতে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি ছিল। সেসময় আদায় ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

আর গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও ১০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এসময়ে ৮৭ হাজার ৬১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ভ্যাট পেয়েছে সরকার, যা মোট আদায়ের ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ।

আয়কর থেকে আয় হয়েছে ৭২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা যা মোট আদায়ের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শুল্ক থেকে আদায় হয়েছে ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা মোট আয়ের ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ করতে না পারার কারণ হিসেবে কর-রাজস্বে রেয়াত, আমদানি হ্রাস ও শুল্ক ফাঁকির প্রবণতাকে দায়ী করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

মোশাররফ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ায় প্রায় ১৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।

“গত অর্থবছরে আমদানি কিছুটা কমে গেছে। খাদ্য পণ্য আমাদনি কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি কমেছে বলে আমার মনে হয়। তাই আমদানি শুল্কও কিছুটা কমেছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ মোট ৫ হাজার ৬০৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলারে পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৮৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

 

শুল্ক ফাঁকির প্রবণতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “জিপি শিট আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। আর রোল শিট আমদানিতে কর দিতে হয় ১০ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রোল শিটের ঘোষণা দিয়ে জিপি শিট আমদানি করেছে।”

এছাড়াও শুল্কমুক্ত বন্ডেডওয়্যার হাউজের সুবিধা নিয়ে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি করা পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় সরকারা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই ৩৪২টি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।”

চলতি অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। সম্ভাব্য এ ব্যয়ের ৭২ শতাংশ  রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।

রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা আহরণ সম্ভব কিনা জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ফলে ভ্যাট আদায় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তাছাড়া রাজস্ব আহরণ জোরদারকরণে এর মধ্যেই আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে।

“করনেটকে ভিত্তি করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। নতুন ১ কোটি করদাতা তৈরির লক্ষ্য সামনে রেখে চলতি অর্থবছরে ৬ লাখ ৭২ হাজার নতুন করদাতাকে করনেটের আওতায় আনতে প্রস্তুতি চলছে।”

এভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।