নিজস্ব সম্পদেই হবে এসডিজি বাস্তবায়ন: পরিকল্পনামন্ত্রী

উন্নত দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চলমান টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বড় ধরনের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 06:04 PM
Updated : 23 July 2019, 06:04 PM

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিপিইডিসি) সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

অভ্যন্তরীন সম্পদ দিয়েই এসডিজি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ শুধু উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অর্থ দেয় না। অর্থ নিজেদের যোগাড় করতে হবে। বিদেশ থেকে অর্থ আসবে বলে মনে হয় না।”

তিনি বলেন,  “উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে এসডিজি অর্জনে অর্থ ব্যয় করতে হবে। এর জন্য অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়াতে হবে। নিজস্ব অর্থায়নে এসডিজি  অর্জন করতে হবে। এমডিজিতে বাংলাদেশ সফল হয়েছে, এসডিজি অর্জনেও সফল হব।

“এতে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া গেলে ভালো হত, কিন্তু পাওয়া যাবে না।”

এর আগে জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০১  থেকে ২০১৫ সাল পর্যযন্ত  ১৫ বছরের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে  মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) শীর্ষক একটি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।

মান্নান বলেন, “ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর মোট দেশজ আয়ের (জিএনআই)  শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ অর্থ জোগান দেওয়ার কথা থাকলেও নরওয়ে, সুইডেন এবং আরো  কয়েকটি দেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।”

গত ৯ থেকে ১৯ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল জিপিইডিসি সম্মেলনে যোগ দেয়।

সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  “আমরা তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। আমরা এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। এসডিজির কাজগুলোকে আমরা উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছি।

”আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেহেতু ভাল আছে তাই  এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা অর্থায়ন করতে পারবো।”

এম এ মান্নান বলেন, “আমি সম্মেলনে বলেছি, এসডিজি বাস্তবায়নে বিদেশ থেকে টাকা পেলে আমাদের ভাল হতো। কিন্তু আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি যে,  আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অতীতে এমডিজি বাস্তবায়নের সময়ও উন্নত বিশ্ব এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা রক্ষা করেনি।”

”তা আমি স্পষ্ট করে সম্মেলনে বলে এসেছি,” বলেন তিনি।

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।

উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তার আশা বাদ দিয়ে অভ্যন্তরীন সম্পদ থেকে এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন ইআরডি সচিব ।

তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হলে আমাদের কিছু কিছু সহায়তা কমে যাবে। যেমন, আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে সবচেয়ে কম সুদে যে ঋণ পাই তা কমে যাবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ঋণের যে প্রবাহ সেটা কমবে না বরং বাড়বে।”

এক্ষেত্রে কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন ইআরডি সচিব। 

“ডব্লিউটিও‘র শর্ত অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ যে বাণিজ্যিক সুবিধা পাই উন্নয়নশীল দেশে গেলে সেগুলো প্রত্যাহার হবে। তবে তার জন্যও ২০২৭ সাল পর্যযন্ত সময় পাওয়া যাবে।”

এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি) থেকে বেরিয়ে গেলে জিএসপি সুবিধা হারানোর প্রসঙ্গ টেনে মনোয়ার আহমেদ  বলেন, “আমরা উন্নয়নশীল দেশ হলে জিএসপি সুবিধা হারালেও জিএসপি প্লাস সুবিধা পাব।

সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলম বলেন,  “২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হলে আমাদের কী করণীয় তা নিয়ে আমরা একটি স্টাডি করেছি। শিগগির এটা প্রকাশ করা হবে।”