‘নয়-ছয় এ চাপ নেই’

ব্যাংক ঋণ এবং আমানতের সুদহার ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2019, 05:50 PM
Updated : 21 July 2019, 05:50 PM

গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন তিনি।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে না আনলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু ব্যাংকাররা বলছেন, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের উপর কোন চাপ নেই।

ব্যাংকার্স মিটিং নামের এই বৈঠকে বাংলাদেশের সরককারি, বেসরকারি ও  বিদেশী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) উপস্থিত ছিলেন।

মাহবুবুর রহমান ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শুধুমাত্র ঘোষণা দিয়ে নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অনেকগুলো বিষয় আছে। তবে আশা করছি ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়ন হবে।”

মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমতে শুরু করেছে এবং রপ্তানি বাড়ছে। এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে ব্যাংক। আগামী জুন প্রান্তিকে এই উদ্যোগের আরও কিছুটা বাস্তবায়ন এবং খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

“শুধু একটি বিষয় নয় এখানে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কিভাবে গ্রামীণ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ বাড়ানো যায় সেই চেষ্টাও করছে ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ মার্চ প্রান্তিকে অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয়ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী প্রান্তিকে কমিয়ে আনার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি  আমরা।”

“আশা করছি এই খেলাপি ঋণ জুন প্রান্তিকে না হলেও ভবিষ্যতে ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুরো ব্যাংক খাত মিলে নয়-ছয় বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

সরকারি ব্যাংকগুলো এটা বাস্তবায়ন করলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন পারছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সব বেসরকারি ব্যাংকেই যে ৯ শতাংশের উপরে সুদ নিচ্ছে তা নয়। কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকও এটা বাস্তবায়ন করেছে। তবে সবগুলো ব্যাংক এই সুদহার বাস্তবায়নে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমরা সবাই মিলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

গভর্নর ফজলে কবির বৈঠকে সভাপতিত্ত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরি, ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান।

কোন ব্যাংক কত সুদে ঋণ দেয় ও আমানত নেয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সেই তথ্যও সংগ্রহ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

মে মাসের প্রজ্ঞাপনের পর এই ফাঁকে কী অগ্রগতি হলো, তা জানতে চেয়ে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠিতে ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নকারী ব্যাংকের তালিকাও চাওয়া হয়েছে।

মে মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়ে দেয়, যেসব ব্যাংকঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা সরকারি তহবিল পাবে না। সাধারণত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দেশের কোনো ব্যাংক বা সরকার-নির্ধারিত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (লিজিং কোম্পানি) জমা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে আমানতের সর্বোচ্চ সুদ বর্তমানে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। তিন মাস বা তার বেশি কিন্তু ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ২৭টি ব্যাংক ৬ শতাংশ বা তার কমে আমানত নেয়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতার পাশাপাশি ৪টি বিদেশি ও ১৭টি বেসরকারি ব্যাংক এ তালিকায় রয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে না আনলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ১৪ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৬ শতাংশ করার বিষয়ে ব্যাংক মালিকরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন এক সাংবাদিক।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যাংকের যে সমস্যাটা, আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি যেন সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। আর এই সিঙ্গেল ডিজিটে রাখার জন্য আমরা কতকগুলি সুবিধাও দিলাম। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি।

“এবারের বাজেটে সেটা বলাই আছে, নির্দেশনাও আছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটা কঠোরা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের এই নিয়মটা মেনে চলতে হবে যেন ঋণটা সিঙ্গেল ডিজিটে হয়। কোনোমতেই যেন ডাবল ডিজিটে না যায়।”