পিপলস লিজিং: অবসায়ক নিয়োগ, ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

বিলুপ্ত হতে যাওয়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক নয় পরিচালক ও দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2019, 02:14 PM
Updated : 16 July 2019, 02:18 PM

এদিকে আদালতের আদেশে পিপলস লিজিংয়ে সাময়িক ভিত্তিতে অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খান অবসায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আদালতের আদেশের পরিপেক্ষিতে সোমবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, কো অপারেটিভ সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএফআইইউ প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আদালত আদেশ দিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার। একই সঙ্গে তাদের সম্পত্তি হস্তান্তরেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আমরা তা পালন করতে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি।”

২০১৪ সালে তদন্ত করে পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদন্তে পরিচালনা বোর্ডের অনেক সদস্যের অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু এতো কিছুর পরও প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। ২৬ জুন মন্ত্রণালয় অবসায়ন করতে অনুমতি দেয়। পরে অবসায়নের জন্য আদালতে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নয় সাবেক পরিচালকের মধ্যে তিনজনই শামসুল আলামিন গ্রুপের মালিকপক্ষের। তাঁরা হলেন নার্গিস আলামিন, হুমায়রা আলামিন ও আরেফিন শামসুল আলামিন। শামসুল আলামিন গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে আবাসন, স্পিনিং, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতে। তাদের কাছে পিপলসের পাওনা ৭৪ কোটি টাকা।

বাকি ছয় সাবেক পরিচালকের মধ্যে এম মোয়াজ্জেম হোসেন বর্তমানে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক ও মতিউর রহমান সাবেক পরিচালক। বর্তমানে মতিউর রহমানের স্ত্রী কামরুন নাহার ব্যাংকটির পরিচালক। পিপলসে মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্তমানে কোনো দেনা নেই। মতিউর রহমানের কাছে ৮৪ কোটি টাকা পায় পিপলস লিজিং।

বাকি চার সাবেক পরিচালক হলেন, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায়, খবিরউদ্দিন মিয়া ও এম শহীদুল হক। এর মধ্যে খবির উদ্দিনের কাছে পিপলসের পাওনা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ও বিশ্বজিত কুমার রায়ের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

সাবেক দুই কর্মকর্তা হলেন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোস্তাক আহমেদ ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক নিপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত। তাদের কাছে পিপলসের পাওনা যথাক্রমে ১৪ কোটি ও দেড় কোটি টাকা।

এদিকে আদালতের আদেশে পিপলস লিজিংয়ে সাময়িক ভিত্তিতে অবসায়ক (লিকুইডেটর) নিয়োগ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খান অবসায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালদ।

একইসঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব হিসাব ও অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত ৯ পরিচালকের নামে থাকা শেয়ার ও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।