সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নিয়ে সতর্কতা

সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টানতে কঠোর হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2019, 04:49 PM
Updated : 2 July 2019, 04:57 PM

নিয়মের বাইরে কেউ যাতে সঞ্চয়পত্র কিনতে না পারে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ‘প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ দ্বারা সঞ্চয় স্কিম ক্রয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭ যথাযথভাবে অনুসরণ’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সঞ্চয়স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে একই সিস্টেম চালু হয়েছে।

এ সিস্টেম হতে প্রাপ্ত দৈনিক বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে বড় অংকের অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা ১৯৭৭ এর বিধি ৫ এর উপবিধি ৫ অনুযায়ী কর কমিশনারের প্রত্যায়ন গ্রহণপূর্বক কৃষিভিত্তিক কয়েকটি ফার্মের আয় দ্বারা ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে।

“সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হারের কারণে প্রতিষ্ঠানিক তহবিল দ্বারা সঞ্চয় স্কিম ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ অপব্যবহার না করা হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”

ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আলম মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম কিছু প্রতিষ্ঠান আইন ভঙ্গ করে সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে এনবিআরের একটি সার্টিফিকেট লাগে। এই আইন মানা হচ্ছিল না।    

“সরকার এখন এ বিষয়ে খুব সজাগ। আমরা বলেছি, যে আইনটি আছে সেটি যেন মেনে চলা হয়।”

সার্কুলারে বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রণীত ‘জাতীয় সঞ্চয় অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা, ১৯৭৭ যথাযথভাবে অনুসরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।

৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

গত বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্য ধরেছিল। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ কোটি টাকা করা হয়।

নতুন বাজেটে এই লক্ষ ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।

বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল, কিন্তু বিক্রি কমেনি।

এর পরেও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমানো হয়নি।

বিক্রি কমাতে নতুন বাজেটে মুনাফার উপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে সরকার ৫ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখতো। ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ করে কাটবে।