নতুন বাজেটে প্রণোদনা দেওয়ায় আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
৩০ জুন রোববার শেষ হওয়া এই অর্থবছরে এক হাজার ৬৪০ কোটি (১৬.৪০ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অংক গত অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ এবং অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।
২০১৪-১৫ অর্বছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস জুনে ১৩৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সবমিলিয়ে ১২ মাসে (জুলাই-জুন) ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিটেন্সে আসে; যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
প্রণোদনা দেওয়ায় নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন।”
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাবেন।
আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় মুস্তফা কামাল বলেছেন, “রেমিমটেন্স প্রেরণে বর্ধিত আয় লাঘব করা এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের ওপর আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হবে।”
এর ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রিজার্ভ ৩২.৪০ বিলিয়ন ডলার
রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
গত ৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে মে আসে।
রেমিটেন্স বাড়ায় তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করেছে মূলত রেমিটেন্স বাড়ার কারণে।
চলতি মাসের ৭/৮ তারিখে মে-জুন মেয়াদের আকুর দেনা পরিশোধ করতে হবে। তারপর অবশ্য রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসবে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ৩০ জুন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা।