কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগে কোনো সুফল আসেনি: ইনু

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে বর্ণনা করে এই সুযোগ নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা সংসদে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2019, 04:37 PM
Updated : 24 June 2019, 04:46 PM

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সোমবার তিনি সংসদে বলেন, “কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের নামে বৈধ করার সুযোগ দিয়ে গত দশ বছরে কোনো সুফল আসেনি। অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি।”

ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় এবং ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ আগে থেকেই ছিল। আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একই সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না।

এর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাজেটের ওপর আলোচনায় বলেন, “অপ্রদর্শিত এবং কালো টাকা বৈধকরণ আমি গ্রহণ করি না। এটাকে আমি অনৈতিক মনে করি।”

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ‘ড. কামাল হোসেন ও খালেদা জিয়া ছাড়া আর কেউ নেননি’ মন্তব্য করে ইনু বলেন, “আর কারা কারা নিয়েছেন তা জানিও না। অন্য কারা এই সুযোগ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী যেন এই সংসদে তার তালিকাটা প্রকাশ করেন।”

কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে ‘সংবিধানের চেতনাবিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করে ইনু বলেন, “কালো টাকা ব্যবহারের পক্ষে যতই সাফাই থাকুক না কেন, এটা অনৈতিক এবং সংবিধানের স্পিরিট বিরোধী। কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাহার করা উচিত।

“কালো টাকার কোনো ভূমিকা ছাড়াই ৮ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। কালো টাকা থেকে সাদা হওয়া টাকা এতবড় সাদা অর্থনীতির গায়ে কলঙ্ক লেপন করবে। আমি চাই না শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাদা অর্থনীতির গায়ে কলঙ্ক লেপন হোক।“

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কী প্রভাব পড়বে তা পর্যবেক্ষণ করে দেখার পরামর্শ দিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, “প্রভাব কী পড়তে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োগের সময় নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা সংশোধন করতে হবে।”

দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কার করে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপরও জোর দেন ইনু।

তিনি বলেন, “ব্যাংক আইন সংশোধন করা দরকার। ব্যাংকের সংখ্যা কমাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বড় বড় ঋণ খেলাপিরা আদালতের সুবিধা নিয়ে টাকা আটকে রাখছে। ৩৭ হাজার কোটি টাকা এভাবে আটকে গেছে। এটা উদ্ধার করা দরকার।”

ফাইল ছবি

অর্থ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে ‘হস্তক্ষেপ’ করছে মন্তব্য করে ইনু বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনতা দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখানে মাথা না ঘামানো ভালো। ব্যাংক কমিশন গঠন করার যে প্রস্তাব আছে তা কবে হবে জানি না।

“এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতে যে বিষফোঁড়া- তা সার্জারি করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। তাকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার দেওয়া উচিত। যতক্ষণ ব্যাংক কমিশন না হচ্ছে ততদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হোক।”

অনেক ‘ইতিবাচক’ বিষয়ের বিপরীতে বাজেটে কিছু ‘নেতিবাচক দিক ও দুর্বলতা’ রয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই শরিক নেতা।

তিনি বলেন, মোবাইল সিমে নতুন শুল্ক আরোপ, টক টাইমের ওপর বাড়তি কর, স্মার্ট ফোনে অত্যাধিক উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে মোবাইল সেক্টর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে থেকে ১০ শতাংশ করাও নেতিবাচক হবে বলে মনে করেন ইনু। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দকে তিনি বর্ণনা করেন ‘হতাশজনক’ হিসেবে।

তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পক্ষে মত দেন এবং অনলাইনে কেনাকাটা ও রাইড শেয়ারিংয়ে নতুন কর আরোপের প্রস্তাব প্রত্যারের প্রস্তাব করেন।