বাজেটে কর আহরণের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন সিপিডির

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর আহরণের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2019, 01:31 PM
Updated : 23 June 2019, 03:07 PM

গবেষণা সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, “জাতীয় বাজেটে কর আহরণের তথ্যের ক্ষেত্রে এনবিআরের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য আর এনবিআরের তথ্য আলাদা।

“তাহলে কী কর আহরণের স্বাস্থ্য ভালো- এই বিষয়টি বোঝাতে এনবিআরের ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে? কর আহরণের সঠিক তথ্য তাহলে কোনটি?”

রোববার ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত বাজেট আলোচনায় মূল প্রবন্ধে এই প্রশ্ন রাখেন ফাহমিদা।

গত ১৩ জুন  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন।

এই ব্যয়ের মধ্যে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা মোট বাজেটের ৭২ শতাংশ। তার এই পরিকল্পনায় আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।

ফাহমিদা কর ছাড় দেওয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে বলেন, “আমরা কী পরিমাণ কর হারাব, এ বিষয়টির কোনো ব্যাখ্যা বাজেট ডকুমেন্টে ছিল না।

“এই কর ছাড় দেওয়া তাহলে কি সুচিন্তিত রাজনৈতিক একটি সিদ্ধান্ত? না কি ছাড় দেওয়ার মূল কারণ আহরণ করা যাচ্ছে না তাই... এ বিষয়টি ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হত।”

বাজেটে আগের বছরে সামাজিক খাতে খরচের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না থাকার কথাও বলেন তিনি।

“বাজেটে আগের বছরের বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে আছে কর কী পরিমাণ আহরণ করা হয়েছে, সেটা কোথায় খরচ করা হয়েছে।

“তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে খরচগুলো, সেগুলোর বিষয়ে তেমন বিশেষ কোনো তথ্য নেই। এরকম আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অভাব বাজেটে দেখা গেছে এ বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার করলে ভালো হত।”

সংসদে বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (ফাইল ছবি)

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বাজেটে কী পরিমাণ টাকা খরচ হল, তা দেখানোর পাশাপাশি যে কারণে খরচ হয়েছে, সেই ‘লাভ’ পাওয়া গেছে কি না তা তুলে ধরা দরকার।

“অর্থমন্ত্রীরা বড় বড় টাকার কথা বলেন এবং তারা খরচ দেখান, কিন্তু কখনোই আমরা জানতে পারি না, সে টাকাগুলো যে কারণে খরচ হয়েছে, আমাদের যা পাওয়ার কথা ছিল, তা কতটুকু আমরা পেয়েছি।”

উন্নয়নের সুফল সমাজের সব স্তর পাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিতের উপর জোর দেন এই অর্থনীতিবিদ।

“এখানে যেসব আলোচনা হয়েছে সেখান থেকে বলা যায় যে দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। এই বৈষম্য বাড়ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের নীতির কারণে; আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নেই সেই কারণে।”

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “তথ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়টি খুবই সঠিক যে আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যানগুলো আমরা সঠিক সময়ে পাচ্ছি না। এটা আমাদের একটা সমস্যা।

“কিন্তু আমরা এ সরকারের আমলে এ বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি; খুব গুরুত্ব দিয়ে এখনও কাজ করছি। আশা করি, আস্তে আস্তে সমস্যাগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।”

মন্ত্রী বলেন,  “জনগণকে আমরা সঠিক তথ্য দিতে পারব। স্বচ্ছতার বিষয়ে আমি বলতে চাই স্বচ্ছতা সবসময়ই দরকার এবং স্বচ্ছতা অবশ্যই ভালো। যত স্বচ্ছতা থাকবে ততটাই জবাবদিহিতা বাড়বে। তবে পুরোপুরি স্বচ্ছতা না পাওয়া গেলেও বিভিন্নভাবে গবেষণা করে কিন্তু আমরা ফলাফলগুলো বুঝতে পারি।

“আপনাদের কাছে হয়ত মনে হচ্ছে বিষয়গুলো স্বচ্ছ না, বাজেট স্বচ্ছ না; কিন্তু আমরা যখন বাজেট তৈরি করছি এবং বাস্তবায়ন করছি, আমরা কিন্তু একটা গবেষণার মাধ্যমে এটার একটা ফলাফল দেখছি।

“আমরা সরাসরি দেখছি, আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা হয়তো কিছুটা অন্যরকম। এজন্য হয়ত আপনারা পুরোপুরি দেখতে পারছেন না। তবে আমরা অবশ্যই সুচিন্তিতভাবে নীতিগুলো নির্ধারণ করছি।”

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।