১১ মাসে গত বছরের চেয়ে ৩% বেশি রপ্তানি আয়
আবদুর রহিম হারমাছি, প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 10 Jun 2019 11:04 PM BdST Updated: 10 Jun 2019 11:04 PM BdST
-
(ফাইল ছবি)
-
(ফাইল ছবি)
তৈরি পোশাকের উপর ভর করে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়েই ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ করতে চলেছে বাংলাদেশ।
বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে তিন হাজার ৭৭৫ কোটি (৩৭.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।
রপ্তানির এই অংক গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়েও ৩ শতাংশ বেশি।
আর জুলাই-মে সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। চামড়া, হিমায়িত চিংড়ি এবং পাট পণ্যের রপ্তানি কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও এপ্রিল মাসে এসে তা কমে যায়। ওই মাসে মাত্র ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল; লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আয় হয়েছিল।
কিন্তু মে মাসে তা ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের মাসে ৩৮১ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৩ হাজার ৭৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার। জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৭২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
জুলাই-মে সময়ে মোট রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ৩ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার।
তবে এই প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি খুশি হন পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৫শতাংশ। সেখানে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে অর্ধেকেরও কম; ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
“এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের পোশাকের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। বেশি পোশাক রপ্তানি করে কম আয় করছি। এখানে আমাদের পোশাক রপ্তানিকারকরাও এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে কম দামে অর্ডার নিচ্ছে। বায়ারাও এই সুযোগ নিয়ে কম দামে পোশাক কিনছে।”
“আমাদের এখন পোশাকের দাম বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, মালিক এবং শ্রমিক সবাই মিলে এক সাথে কাজ করতে হবে।”
“তানাহলে এখন যে ১১/১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটাও ভবিষ্যতে থাকবে না।”
ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র বিদায়ী সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা সন্তোষজনক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর পেছনেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
ব্যাংক ঋণের অধিক সুদ হার এবং বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার বিপরীতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ‘অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ছেন’ দাবি করে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, এজন্য সরকারকে ব্যবসা ও বিভিন্ন খাতের প্রতি আরও যত্নবান হতে হবে। কেবল দুয়েকটি পণ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন পণ্য যোগ করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন বাজারও খুজে বের করতে হবে।
অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার পুরো বছর ধরেই রপ্তানিতে মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রেমিটেন্সের পাশপাশি রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। আমদানি বাড়ার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েনি।”
পোশাক খাত
রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৪০ লাখ (৩১.৭৩ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এই ১১ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।
জুলাই-মে সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৪ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। উভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার: প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।
চামড়াজাত পণ্য
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের উৎস চামড়া শিল্পের খরা আরও প্রকট হয়েছে। অর্থবছরের ১১ মাস পার হলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির ধারা থেকে বের হতে পারেনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের এই খাত।
জুলাই-মে সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। লক্ষ্য ধরা ছিল ১০২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোটা বিশ্বব্যাপীই এখন চামড়া শিল্পের খারাপ সময় যাচ্ছে। তারই প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেটাই চামড়াজাত পণ্যের বাজারকে খারাপ করে দিয়েছে।
“চীন বাংলাদেশ থেকে ফিনিস লেদার আমদানি করে তা দিয়ে পণ্য তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করত। বর্তমানে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ট্রেড ওয়্যারের কারণে।”
এছাড়া হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর এই পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।
“সাভারে যাওয়ার পর অবকাঠামোগত নানা জটিলতায় পড়েছে এই শিল্প। তবে সরকারকে বর্তমানে সিরিয়াস মনে হচ্ছে। তাই অচিরেই দেশীয় সমস্যা কেটে যাবে বলে আমরা আশা করি,” বলেন তিনি।
পাট পণ্য
বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৭৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতেও দেখা দিয়েছে ২০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
হিমায়িত চিংড়ি
জুলাই-মে সময়ে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৪ কোটি ডলার আয় করেছে। রপ্তানির এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।
এই ১১ মাসে এ খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কৃষিপণ্য
তবে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এই ১১ মাসে শাক-সবজি রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তামাক রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। শুকনা খাবার রপ্তানি ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। চা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ওষুধ
জুলাই-মে সময়ে ওষুধ রপ্তানিতে ২৮ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।
এ সময়ে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ১০ কোটি ১৮ লাখ ডলার।
-
ফের কমানো হল টাকার মান, ডলারের বাজার লাগামহীন
-
বিদেশ সফর সীমিত হল সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে
-
সমালোচনা করার আগে গ্রামে গিয়ে দেখে আসুন: প্রধানমন্ত্রী
-
পণ্য নিয়ে এ মাসে নামছে না টিসিবির ট্রাক
-
নতুন এডিপিতে এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে যোগাযোগে
-
সার উৎপাদন ও মজুদের সঠিক হিসাব রাখার নির্দেশ
-
লক্ষ্মীপুরে ক্ষেতেই পচছে সয়াবিন
-
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরবে, আশায় অর্থমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
- শ্রীলঙ্কাকে চারশর নিচে থামানোর পর তামিম-জয়ের দৃঢ়তা
- সাকিবের ‘চায়নাম্যান ডেলিভারি’ আগে দেখেননি ম্যাথিউস
- বিদেশ সফর সীমিত হল সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে
- ফের কমানো হল টাকার মান, ডলারের বাজার লাগামহীন
- ছবি প্রকাশ, তাজমহলের সেই কুঠুরিতে ‘কোনো রহস্য নেই’
- যানজট নিরসনে রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ চান মেয়র তাপস
- ‘ট্রফি ধরে রাখতে আমরা জীবন দিয়ে দেব’
- খুলনায় অস্ত্রের মুখে দুই বোনকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’
- তামিম-জয়ের ব্যাটে ৬১ ইনিংসের খরা কাটানোর আশা
- অবৈধদের শিক্ষা দিতে গ্যাস বন্ধ ঢাকার এক এলাকায়