নয় জায়গায় কর ছাড় চায় বীমা কোম্পানিগুলো

নতুন বাজেটে বীমায় আটটি ক্ষেত্রে কর ছাড়ের দাবি জানিয়েছে বীমা মলিক ও নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2019, 02:06 PM
Updated : 21 May 2019, 02:07 PM

মঙ্গলবার বিআইএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “লাইফ ও নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে আমাদের এ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।”

দাবিগুলো হল-

১. পুনঃবীমা কমিশনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে যে উৎসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায় করা হয়, তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া।

এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। যেহেতু একই বিষয়ের ওপরে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে, তাই আবারও এই বিষয়ে ভ্যাট দিতে হলে তা দ্বৈত করের শামিল হবে।

২. নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র স্বাস্থ্য বীমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা।

এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, লাইফ ইন্স্যুরেন্সগুলো (জীবন বীমা) হেলথ্ ইন্স্যুরেন্স কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের এই পলিসির জন্য ভ্যাট দিতে হয় না। সেখানে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হেলথ্ পলিসির ওপর ভ্যাট থাকায় তাতে গ্রাহকরা আগ্রহী হচ্ছে না। হেলথ পলিসির ওপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করা হলে অনেক গ্রাহকই হেলথ্ পলিসির আওতায় আসবে।

৩. জীবন বীমা পলিসি হোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কর্তন বন্ধ করা।

এ দাবির পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়, পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করার ফলে দেশের সব লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর পলিসি হোল্ডারদের সংখ্যা কমে গেছে।

৪. বীমা এজেন্টদের উৎসে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া।

এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বীমা এজেন্টদের কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে, বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ প্রেক্ষিতে বীমা শিল্পে কর্মরত স্বল্প আয়ের এজেন্টদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ন্যয় ন্যূনতম করমুক্ত আয় সীমা পর্যন্ত উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত।

৫. পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের ওপর উৎসে কর রহিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলো পুনঃবীমা প্রিমিয়াম পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন সম্পর্কিত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। পুনঃবীমার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হলে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে এবং এই শিল্পে একটি সংকটময় পরিস্থিতি উদ্ভব হবে।

৬. কর্পোরেট কর হার কমানোর দাবি।

এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম। তাই বীমা কোম্পানির কর্পোরেট কর হার কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।

৭. কৃষি বীমার ওপর থেকে কর রহিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়, জলবায়ু পবির্তনের কারণে এই খাত ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে, যার ফলে কৃষকরা কৃষি কাজে অনীহা প্রকাশ করছে। তাই কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা অপরিহার্য। কৃষি বীমা উন্নয়নে কৃষি বীমা প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং কৃষি বীমা থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর্পোরেট কর হার রহিত করা প্রয়োজন।

৮. অনলাইনভিত্তিক বীমার প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর রহিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়, ভিশন ২০২০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ইতোমধ্যে বীমা খাত অনলাইন পলিসি ইস্যু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ বীমা সেবা দেওয়ার পথকে সুগম করবে।

৯. নতুন সামাজিক পণ্যে ট্যাক্স ও ভ্যাট ছাড়।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক বীমা পণ্য এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা ম্যাক্রো অর্থনীতির উন্নয়নে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের জীবনযাত্রার মানের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সামাজিক জীবন যাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে বীমা শিল্পের আওতায় আনতে যে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন, তার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে এবং গ্রাহকদের কর অবকাশের অথবা ক্যাশ ইনসেনটিভের সুযোগ দেওয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইএ’র সহ-সভাপতি রুবিনা হামিদ ও মনিরুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, জামাল এ নাসের,  নাসির উদ্দিন পাভেল, ফারজানা চৌধুরী, আদিবা সুলতানা প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন।