মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব কমিটির বৈঠকে রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের ২০১২-১৩ অর্থবছরের হিসাব নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসে।
কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তহবিল থেকে দুই হাজার ১২৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর আয়কর পরিশোধ করা হয়। অডিট দপ্তর সেই টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করতে বলে। ২০১৪ সালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত রূপালী টাকা আদায় করেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও রূপালী ব্যাংককে ওই টাকা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদায় করার সুপারিশ করে।
এরপরেও অর্থ আদায় না করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, যাদের আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন, কেউ অবসর নিয়েছেন। এ অবস্থায় টাকা ফেরত নিলে অনেকেই আর্থিক সমস্যায় পড়বেন।
তাদের ওই যুক্তির জবাবে সাবেকদের গ্রাচুইটি, পেনশন থেকে হলেও টাকা আদায় করতে বলেছে অডিট দপ্তর।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটি এটাকে ব্যাক্তিগত দায় হিসেবে চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে টাকা আদায়ের সুপারিশ করে।
বৈঠকে রপ্তানিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান ডিভাইন নীট ওয়্যারের অনুকূলে ফোর্সড লোনের (গ্রাহকের নামে বাধ্যতামূলক ঋণ সৃষ্টি করে আমদানির দেনা শোধ করা) মেয়াদোত্তীর্ণ ২২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা অনাদায়ী মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়েও আলোচনা হয়।
কার্যপত্রে দেখা গেছে, রূপালী ব্যাংকের সদর কর্পোরেট শাখা থেকে এই ঋণ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ব্যক্তির নামে ওই ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তির নামে ঋণ প্রদানকে ‘চরম অন্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এই ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দায়েরকৃত মামলা তদারক করার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে রপ্তানি বিল ও জামানতবিহীন ব্যাংক ওডি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ২৬ কোটি ৫৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়েও আলোচনা হয়।
এছাড়া সীমাতিরিক্ত চলতি মূলধন সিসি হাইপো ঋণবিতরণ, ডাউন পেমেন্ট ব্যতীত পুনঃতফসিলিকরণ এবং মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুয়ায়ী মেয়াদী ঋণ ও ফোর্সড লোন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক ১১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করাকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে দায়ী রাখার বিধান চালু করার পাশাপাশি বকেয়া ঋণের উপর ৯ শতাংশ হারে সুদ আরোপ এবং দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, জহিরুল হক ভূঁঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং জাহিদুর রহমান অংশ নেন।