ঋণ গ্রহীতা ‘ভালো’ হলে সুদে ১০% ছাড়

ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর যারা ‘ভালো’ ঋণ গ্রহীতা, তাদের বিশেষ প্রণোদনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 04:05 PM
Updated : 16 May 2019, 04:15 PM

ঋণ খেলাপিরা তাদেরকে মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের প্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবেন।

আর ‘ভালো’ ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে তাদের ঋণের বিপরীতে যে সুদ আদায় করা হবে, তার ১০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলাদা দুটি সার্কুলারে সিদ্ধান্ত দুটি জানানো হয়।

ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা আগেই বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; সেই সঙ্গে এখন অন্য ঋণগ্রহীতাদের জন্যও প্রণোদনা এল।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, ভালো ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে তাদের ঋণের বিপরীতে যে সুদ আদায় করা হবে তার ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা দিতে হবে।

অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা সুদ পাওনা হলে ৯০ টাকা আদায় করে ১০ টাকা ছাড় দিতে হবে।

গ্রাহক ‘ভালো’ ঋণগ্রহীতা হলে প্রতি বছর এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে বর্ধিত ঋণ সুবিধাও পাবেন তিনি।

‘ভালো’ ঋণগ্রহীতা সুবিধা পাওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতাদের আবেদন করতে হবে না। ব্যাংকগুলোকে নিজ উদ্যোগে তাদের চিহ্নিত করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলমান/তলবী/মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস শেষে বিগত ১২ মাসের (অর্থাৎ বিগত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সব কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হলে সেই ঋণগ্রহীতা ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সুদের উপর ১০ শতাংশ ছাড় ছাড়াও ভালো ঋণগ্রহতাদের প্রতি বছর বিশেষ সনদ দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। সেরা ১০ ‘ভালো’ ঋণগ্রহীতার ছবিসহ তাদের ব্যবসা সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হবে।

ঋণ খেলাপিদের সুযোগ

গত ২৫ মার্চ ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছিল; তার মধ্যেই ওই ঘোষণা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা করল।

তবে অর্থমন্ত্রী ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১২ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় ১২ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইল ছবি

ঋণ খেলাপিদের এই সুযোগ নিতে হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তারপরে এ সুবিধা আর পাওয়া যাবে না বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শীর্ষক ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে পারছেন না বলে উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণ প্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতের বিরূপভাবে শ্রেণীকৃত ঋণ নিয়মিতভাবে আদায়ের লক্ষ্যে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

যে সব ঋণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মন্দ/ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হয়েছে সে সব ঋণ গ্রহীতার অনুকুলে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই পুঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মোট ঋণের (ঋণ স্থিতি) ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউনে পেমেন্ট নগদে গ্রহণ করতে হবে।

ঋণ পরিশোধের জন্য ৯টি মাসিক কিস্তি অথবা ৩টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মধ্যে ২টি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।

পুনঃতফসিলের পরে ব্যাংক থেকে গ্রাহক নতুন ঋণ নিতে পারবে। তবে নতুন নেওয়া ঋণ যথানিয়মে পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগের সুবিধাও বাতিল হয়ে যাবে।

২০১৫ সালে ঋণ খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। তবে সুবিধা পাওয়ার পরও দুটি গ্রুপ ছাড়া আর কেউ টাকা পরিশোধ করছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এই অর্থ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

আরও খবর