৭২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহায়তার লক্ষ্য থাকছে আগামী এডিপিতে

চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী অর্থায়ন করে প্রকল্পের গতি বাড়াতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রেকর্ড বিদেশি সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করতে যাচ্ছে সরকার।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2019, 07:44 AM
Updated : 21 April 2019, 07:44 AM

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আশা করছে, আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় দাতাদের কাছ থেকে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এ সহায়তা পাওয়া যাবে হবে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় এই অংক প্রায় ২৯ শতাংশ বেশি। এবারের সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ ৫১ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। তবে গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় এডিপি সংশোধন করে তা ৫১ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এবং প্রকল্প চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দের পরিকল্পনা সাজানোর চেষ্টা করেছি।”

তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরের বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ নির্ণয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের তাদের চাহিদার বিপরীতে এ বরাদ্দ ধরা হয়েছে।”

মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রকল্প এ বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

ইআরডি‘র খসড়ায় দেখা যায়, বিদেশি সহায়তায় চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে রাশিয়ার অর্থায়নে চলমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেতে পারে জাপানের অর্থায়নে চলমান “এমআরটি-৬” বা (উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্য়ন্ত) মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছর ৫ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করতে যাচ্ছে ইআরডি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

খসড়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে জাপানের অর্থায়নে চলমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে।

এছাড়া জাপানের অর্থায়নে চলমান মাতারবারি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে।

চীনা সহায়তায় চলমান পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য  ২ হাজার কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা এবং ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং’ প্রকল্পে ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।

এডিবির অর্থায়নে চলমান কক্সবাজার রামু হয়ে ঘুমধুম পর্য়ন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ইআরডি।

বৈদেশিক সম্পদের যোগানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিত্তিক বরাদ্দের চিত্রে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৬১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়।

এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে ৯৯৭ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকার  বরাদ্দ করার কথা বলছে ইআরডি।