তাঁত কারখানা বন্ধ হয়েছে ১২ হাজারের বেশি, আছে মাত্র ৫৮১টি

এক সময়ের প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্প ক্রমেই বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে, গত দেড় দশকে অধিকাংশ তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2019, 07:17 PM
Updated : 16 April 2019, 07:17 PM

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘তাঁত শুমারি ২০১৮’ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০০৩ সালের তাঁত শুমারিতে দেশে ১২ হাজার ৮১৯টি তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানা ছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালের শুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মাত্র ৫৮১টি তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানা আছে। বাকি ১২ হাজার ২৩৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।”

রাজধানীর আগারগাঁয়ে পরিসংখ্যান ভবন সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃঞ্চা গায়েনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী।

অনুষ্ঠানে শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বর্তমানে কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দেশে মোট তাঁত শিল্প আছে মাত্র ৫৮১টি। ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী দেশে ১২ হাজার ৮১৯টি তাঁত শিল্প ছিল। বাকি শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

“দেশে বর্তমানে খানা ও শিল্পভিত্তিক মোট তাঁত আছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬টি। এর মধ্যে খানাভিত্তিক তাঁত রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫টি। আর বাকি ৫৮১টি কারখানা বা শিল্প পর্যায়ে।

“এর আগে ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী ওই সময়ে দেশে মোট তাঁত শিল্প ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে কারখানা বা শিল্প পর্যায়ে তাঁত শিল্প ছিল ১২ হাজার ৮১৯টি আর বাকি ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৯৩টি তাঁত ছিল খানাভিত্তিক।”

মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ১৯৯০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো তাঁত শুমারি হয়। ওই সময়ে দেশে মোট তাঁত শিল্প ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৪২৯টি।

তিনি বলেন, দেশে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রায় ৩৭ শতাংশ তাঁত শিল্প হ্রাস পেয়েছে। আর ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ৪৫ শতাংশ তাঁত হ্রাস পেয়েছে।”

“মূলত তাঁত পেশায় আয় কম, হস্ত শিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, তাঁত শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের অভাব এবং বাজারজাতকরণ সমস্যার কারণেই এ শিল্পটি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।”

প্রকল্প পরিচালক বলেন, শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে তাঁত শিল্পে এখনও তিন লাখ এক হাজার ৭৫৭ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।

বর্তমানে তাঁত শিল্পে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন বা ৪৪ শতাংশ পুরুষ আর ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ জন বা প্রায় ৫৬ শতাংশ নারী শ্রমিক এ শিল্পে কাজ করেন।

তিনি জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি তাঁত রয়েছে চট্টগ্রামে। মোট তাঁতের ৫৬ শতাংশের বেশি শুধু চট্টগ্রামেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানেই এই তাঁত শিল্প বেশি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “দেশে ব্যাপকভাবে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে যান্ত্রিকীকরণ। আগের হস্তচালিত তাঁত শিল্প এখন যান্ত্রিকীকরণের ফলে শ্রমিকও কাজ হারিয়েছে। আগে তাঁত আমাদের যে প্রধান ভূমিকা রাখত তা আর থাকবে না।”