সঞ্চয়পত্র: আট মাসে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ধার

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়েও ৩৬ শতাংশ বেশি নিয়ে ফেলেছে আট মাসেই।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2019, 12:39 PM
Updated : 4 April 2019, 12:39 PM

এদিকে অনলঅইনে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে সারা দেশের সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা কার্যক্রমকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে (অনলাইন) নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

অথচ এবারের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল।

এ হিসাবে অর্থবছরের আট মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থ ধার করে ফেলেছে সরকার।

পুঁজিবাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি খুব একটা কমেনি।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।

বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফাইল ছবি: মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র কিনতে ক্রেতাদের ভীর

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়িয়েছে…। কিন্তু মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দার কারণেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি কমেনি।

এর পরেও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর‌্যন্ত কমানো হয়নি।

জায়েদ বখত বলেন, “এভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সেই বোঝা কমাতেই এর সুদের হার কমানো উচিৎ বলে আমি মনে করি।”

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র’ এবং মহিলাদের জন্য ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি ৪,৬০৬ কোটি টাকা

সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৬০৬ কোটি ১০ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের মার্চে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

তবে জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। জানুয়ারিতে ৬ হাজার ৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। যা ছিল এক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি নিট বিক্রি।

জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা অনলাইনে

এদিকে আগামী অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে সারা দেশের সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা কার্যক্রমকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার (অনলাইন) মধ্যে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২৪ মার্চ এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার একটি সার্কুলার জারি করেছে।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, তার আওতায় চলছে ‘জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প অনলাইন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ নামের আরেকটি কর্মসূচি।

এই কর্মসূচি সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ ও আসলকে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কাজ করছে।

সার্কুলারে মার্চ মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে, চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যে বিভাগীয় শহরে এবং জুন মাসের মধ্যে দেশের সব স্থানে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করতে বলা হয়েছে।

“১ জুলাই থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূতভাবে কোনো সঞ্চয়পত্র লেনদেন করা যাবে না।”

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।