গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় জালালাবাদ ও বাখরাবাদও

আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে মিশ্রিত হওয়ার ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতো গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2019, 06:24 PM
Updated : 13 March 2019, 06:24 PM

বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি অডিটোরিয়ামে বাখরাবাদ গ্যাস এবং বিকালে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবের উপর শুনানি হয়।

বাখরাবাদ গ্যাসের বর্তমান গড় মূল্য ৭ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১০২ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৯১ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। মূল্য বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি বর্তমান গড় মূল্যহার ৭ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৯০ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।

গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রগুলেটরি কমিশনে মূল্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এর একদিন পরেই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় জালালাবাদ গ্যাস।

শুনানিতে অংশ নেওয়া সব শ্রেণির ভোক্তা প্রতিনিধিই এই আবেদন নাকচ করে মূল্যবৃদ্ধি আপাতত স্থগিত রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বিদেশ থেকে চড়া মূল্যে এলএনজি না কিনে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসকূপ আবিষ্কারে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।   

গড়ে এক হাজার এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি ও এর ব্যয় বিবেচনা করা হয়েছে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবে।

বিতরণ কোম্পনিগুলোর কাছে ভারিত গড় মূল্যহার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ১৪ দশমিক ৯১ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রো বাংলা।

সেই হিসাবে ধরে নতুন মূল্য প্রস্তাব করেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ো জেলায় গ্যাস সরবরাহকারী বাখরাবাদ। আর সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে গ্যাস সরবরাহকারী জালালাবাদ গ্যাস মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে রয়েছে এলএনজি মিশ্রনে ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি ও ঘাটতি কমিয়ে আনার কথা।

বাখরাবাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা (২০৮ শতাংশ), সার কারখানায় ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা (২১১ শতাংশ), সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা (৫০শতাংশ), ক্যাপটিভ পাওয়ার সংযোগে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা (৯৬শতাংশ), শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা (১৩২শতাংশ), বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা (৪১শতাংশ), গৃহস্থালিতে সিঙ্গেল বার্নার ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা, ডাবল বার্নার ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। আবাসিকে মূল্য বৃদ্ধির হার ৮০ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে গড় মূল্য বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাখরাবাদ গ্যাসের গড় মূল্য ৭টাকা ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৯১ পয়সা করার প্রস্তাব রয়েছে আবেদনে।

একই হারে প্রস্তাব করা হয়েছে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিও একই হারে প্রস্তাব করে। তবে চা বাগান অধ্যুষিত এই অঞ্চলে চা বাগান খাতে প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১০৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৩৯ পয়সা করার কথা বলা হচ্ছে।

বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে বিদ্যুৎ ১৯টি, সার ১টি, শিল্প ১৬৮টি, সিএনজি ৯১টি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ৭৮টি, বাণিজ্যিক ২১৩৯টি এবং আবাসিকে রয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৯টি গ্রাহক রয়েছে।

আর জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১টি সারকারখানা, ১১১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১০৯টি শিল্প, ১৬৭৭টি বাণিজ্যিক, ৯৫টি চা বাগান, ৫৮টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং দুই লাখ ২১ হাজার৬০২ টি গৃহস্থালী সংযোগ রয়েছে।

বিইআরসির কারিগরি কমিটির মূল্যায়নে বলা হয়, বর্তমানে ৩২০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমাদানি এবং অদূর ভবিষ্যতে (২০১৯-২০ অর্থবছরে) ৮০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমাদনি বিবেচনায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই শুনানি হচ্ছে।

শুনানিতে এদিনে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি ভোক্তাদের পক্ষে বলেন, যেই পরিমাণ এলএনজির জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলা হচ্ছে তা হওয়ার আগেই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনা সম্পূর্ণ বেআইনি।

সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ালে জনজীবনে এর কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে সেই দিকটি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন গবেষণার। যদি মনে হয় দাম বৃদ্ধি করলে সার্বিকভাবে উপকার হবে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধি গ্রাহক পর্যায়ে প্রচন্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।”

সিএনজি ফিলিং স্টেশনের প্রতিনিধি ফারহান নূর ভূইয়া বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো বর্তমানে ৩২ টাকা প্রতি ঘনমিটার দরে গ্যাসের দাম দিয়ে আসছে। এর ওপর আবারও দাম বৃদ্ধি করাটা এই সেক্টরের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।  একটি সেক্টরকে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এমনটি করা হচ্ছে বলে মনে হয়।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শুনানিতে বেশ কয়েকজন সাধারণ ভোক্তাও গ্যাসের দাম না বাড়াতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সকালে এই শুনানি চলাকালে শুনানি স্থল কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবনের বাইরে বিক্ষোভ মিছিলে করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।