আরসিবিসির মামলা সময়ক্ষেপণের কৌশল: বাংলাদেশ ব্যাংক

ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন-আরসিবিসি  ‘মানহানির’ অভিযোগ এনে যে মামলা করেছে, তাকে  সময়ক্ষেপণের কৌশল হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2019, 03:49 PM
Updated : 12 March 2019, 03:49 PM

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, “তাদের ওই মামলা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই। আমাদের টাকা উদ্ধারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।”

তিন বছর আগে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের আশায় গত ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তার জবাবে আরসিবিসি মানহানির অভিযোগ এনে গত ৬ মার্চ ফিলিপিন্সের সিভিল কোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি মামলা করে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ফিলিপিন্সের ব্যাংকটি বলছে, তাদের কোম্পানির সুনাম ও ভাবমূর্তির ওপর বার বার ‘অশুভ আক্রমণ’ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করা হয়েছে মামলায়।

এক বিবৃতিতে আরসিবিসি বলেছে, “টাকা আদায় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিরাট এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, সেজন্য তারা আরসিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে, ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু যে টাকার জন্য এটা তারা করছে, তা কখনোই আরসিবিসির কাছে ছিল না, ওই টাকার দায়ও আরসিবিসির নয়।” 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আরসিবিসি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে ওই মামলা করেছে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা হওয়ার পর নিউ  ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, ফিলিপিন্স সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে আরসিবিসিকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। 

“সেই চাপের কারণে আক্রোশের বশে এবং সময়ক্ষেপণের চেষ্টায় তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।”

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয়।

ওই টাকা জমা হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে তা চলে যায় জুয়ার টেবিলে।

এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেয় ফিলিপিন্স সরকার। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে বাকি টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তার কোনো হদিস মেলেনি।

ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় গত ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ চুরির কাজে ‘অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের’ সহায়তা নেয় আসামিরা।

‘নেস্টেগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ এর মত ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য পথ বের করে। পরে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় নিউ ইয়র্ক ও ফিলিপিন্সে আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে।

এজাহারে বলা হয়, “ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়গুলো ঘটতে দিয়েছেন।”

গভর্নর ফজলে কবির সে সময় বলেছিলেন, চুরি যাওয়া টাকা ফিলিপিন্সের কোথায় আছে, তা তাদের জানা আছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আসামি করেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কৌঁসুলি আজমালুল হোসেন কিউসি গত ৪ মার্চ জানান, ফিলিপিন্সের বিবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করে অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালাবে বাংলাদেশ।

“আমাদের আইনি লড়াই চলছে। নিউ নিয়র্ক ফেডারেল কোর্টে মামলা শুরু করে দিয়েছি। আগামী ২ এপ্রিল মামলার ডেট আছে। তার আগে যারা এই মামলার বিবাদী পক্ষ আছে, তাদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি। সমঝোতার মাধ্যমে যাতে বিষয়টির সম্মানজনক সমাধান হয়, সেজন্যই আলোচনায় বসতে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আইনজীবীসহ তাদের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সে অবস্থান করছেন। বুধবার তাদের আরসিবিসির সঙ্গে বসার কথা রয়েছে।