ভারত থেকে আরও ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার প্রস্তুতি চলছে: প্রতিমন্ত্রী

ভারত থেকে সরকার আরও দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2019, 07:07 PM
Updated : 10 March 2019, 07:07 PM

রোববার ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা জানান।

এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা সুবিধা তুলে ধরে নসরুল বলেন, “খুব দ্রুত সময়ে, কম খরচে এবং জায়গা লাগে না, শুধু ট্রান্সমিশন লাইন করলেই হয়ে যায়।”

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী।

সিপিডি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন ড. ম তামিম, অধ্যাপক বদরুল আলম, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। সিপিডি সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এই সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

নসরুল হামিদ বলেন, “আমাদের টোটাল মাস্টারপ্ল্যানে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদ্যুত প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে নেব। যদি টেকনোলজি পার্মিট করে এটা আমরা বাড়াতেও পারি।”

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, তবে শহরে বাড়ির ছাদের ওপরে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি কাজ চলছে।

তিনি বলেন, “অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন ৫০ হাজার মেগাওয়াট সোলারে করে ফেলেন বা ১০ হাজার মেগাওয়াট সোলার করে ফেলেন, আমরা নিজেরা কনফিউজড হয়ে যাই।

“যদি বড় বড় ইকোনমিস্টরা এ ধরনের কথা বলেন সাধারণ মানুষ আরও বেশি কনফিউজড হবে।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তরল জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি অনেক বেশি খরচ। তাই আমরা লিকুইড ফুয়েল থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছি। কিন্তু বড় বড় কেন্দ্রগুলো আসতেও সময় লাগছে।

“আমাদের উন্নয়ন থেমে নেই, চাহিদা বাড়ছে। তাই আমরা তরল জ্বালানির কেন্দ্র তৈরি করেছিলাম। চাহিদা তো থেমে নেই। তাই বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র না আসা পর্যন্ত ওইগুলো আমাদের চালাতেও হচ্ছে।”

রেহমান সোবহান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ আসার কথা তুলে ধরে বলেন, “এখাতে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুত প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণে অনেক বেশি ব্যয়  ধরা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানি যারা এদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে এসেছে তারা সবার জন্যই সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লাভের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এপরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক হওয়া উচিত।

বিদ্যুতে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে নসরুল বলেন, “এখন সেই দিন নেই। একসময় ৪৪ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে এটা ছিল। এখন সেই সিস্টেম লস মাত্র ১১ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এবং দিন দিন এটা কমছে।”

দেশের বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সাজেশন্স সাজেশন্স দিতে দিতে আমরা অনেক সময় পার করে ফেলেছি। আমাদের এক্সপার্ট বিশেষজ্ঞদের স্পেসিফিক প্ল্যান থাকা দরকার। ভুল ধরার জন্য অনেক মানুষ পাওয়া যায়। বাট এস্পিসিফিক প্ল্যান নিয়ে এগুতে বড় সাহস লাগে।”

ম তামিম বলেন, “আমরা যেভাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন করতে চাচ্ছি তাতে আগামীতে ৯০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করতে হবে। অথচ আমাদের দক্ষতার অভাবে দেশের গ্যাস আবিষ্কার করতে পারছি না। সমুদ্র থেকে অনেক গ্যাস পাওয়ার আশা করলেও আমরা তা করতে পারছি না। আমাদের বাপেক্স বা পেট্রোবাংলা দিয়ে না হলে বিদেশি দক্ষ কোম্পানি নিয়োগ দিতে হবে।”

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি কমিয়ে আনতে ২০২১-২০৩০ সালের জন্য একটি ‘ইমারজেন্সী ম্যানেজমেন্ট’ তৈরির পরামর্শ দেন।

কয়লা ও গ্যাস ব্যবহারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমাদের গ্যাস এবং কয়লা ব্যবহারের উপযুক্ত সময়। আমাদের কী পরিমাণ গ্যাস ও কয়লা মজুত আছে, তা জরিপ চালিয়ে সরকারের স্পষ্ট করা উচিৎ।”