আট মাসে ১.৬৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 12:02 PM
Updated : 28 Feb 2019, 12:03 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১৬৬  কোটি  (১.৬৬  বিলিয়ন) ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে।

বুধবারও  ২ কোটি  (২০ মিলিয়ন) ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদার যোগান দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতেই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন বড় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আমদানির জন্য বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে বাজারে অস্থিরতা সৃস্টি করতে না পারে সেজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার চাড়ছে।

“বাংলাদেশ  ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা একটা স্বাভাবিক বিষয়। বাজারে যখন ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায় তখন কেনা হয়। আবার যখন চাহিদা বেড়ে যায় তখন বিক্রি করা হয়। এখন সেটাই করা হচ্ছে।”

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কারণে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্যাংকগুলো বন্ধ ছিল। বুধবার আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ১৫ পয়সা। এই দামেই ব্যাংকগুলোর কাছে ২ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৮৪ টাকা ৩০ পয়সা দরে। আর কিনেছে ৮৩ টাকা করে।

এক বছরে ডলারের দর বেড়েছে ১.৫ শতাংশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরে আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

অর্থাৎ এই এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১.৫ শতাংশ কমেছে।

২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮২ টাকা ৯৫ পয়সা। বুধবার সেই ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা ১৫ পয়সায়।

আহসান এইচ মনসুর

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

 ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক কাজই করছে ’ মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে এ দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম।

তথ্য দিয়ে এই গবেষক বলেন, গত এক বছরে ভারতীয় মুদ্রা রূপির বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে দেড় শতাংশের মতো।

“আমি মনে করি বর্তমান বিশ্ববাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডলার-টাকার বিনিময় হার ৮৫ টাকা হওয়া উচিৎ। এবং দ্রুতই এটা হওয়া উচিৎ।”

বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভ ৩২.২ বিলিয়ন ডলার

রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১১৫ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে এসেছিল।

গত দুই মাসে তা বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছে।

গত কয়েক বছর ধরেই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে  রিজার্ভ। ২০১৬ সালের  ১ সেপ্টেম্বর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ঐ বছরেরই ৪ নভেম্বর ছাড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার।

২০১৭ সালের ২২ জুন রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। মাস দুয়েকের মধ্যে তা আরও বেড়ে ৩৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে উটে। আর ওটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।