অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়ানোর নির্দেশনা

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2019, 04:04 PM
Updated : 27 Feb 2019, 04:04 PM

বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।

এদিনের সভায় মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৬ কোটি টাকা।

সভার পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পটি অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খুব বাধ্য না হলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা যাবে না।”

মিরসরাই অর্থনতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ভূমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে আসছেন স্থানীয়রা। তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন।

সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে সরকার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই অঞ্চলগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে।

একনেকের এই সভায় ২ হাজার ২৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদিত প্রকল্পটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এখন আরেকটি নতুন প্রকল্পের আওতায় ফ্ল্যাটের পরিবর্তে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বসতভিটায় বাড়ি করে দেবে সরকার।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা নিজ বসতভিটা ছেড়ে ফ্ল্যাটে যেতে চান না। এছাড়া ফ্ল্যাটের উত্তরাধিকার নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার পাঁচতলা বিশিষ্ট এসব ভবনে লিফটের ব্যবস্থাও ছিল না। এসব কারণে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প প্রত্যাহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক তলা বাসস্থান নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের বসতভিটা নেই তাদেরকে সরকারি খাস জমিতে বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া হবে। বহুতল ভবন নির্মাণের যে দুই হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তা দিয়েই একতলা বাসস্থান নির্মাণের প্রকল্প কাজ শুরু হবে।

মন্ত্রী জানান, সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ভাতা প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আগামীতে বেতন বাড়লেও আনুপাতিক হারে ভাতার পরিমাণ আর বাড়বে না।

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপনের আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সভায়।

এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ পাওয়া যাবে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, “অনুমোদিত প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমাদানি করা হবে।”

গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় কারখানা স্থাপন  (সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে সভায়। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।

মোংলা বন্দরের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ৪৩৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে।

প্রকল্পটি অনুমোদনকালে বন্দরটি সচল রাখতে সারা বছর খনন কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন  বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের সব জাতীয় মহাসড়ককে চার লেইনে উন্নীত করতে এ সংক্রান্ত তথ্য, ম্যাপ ও পকিল্পনা দ্রুত সময়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া মহাসড়ক চার লেইনের উন্নীত করতে বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্পের পরিবর্তে বড় একটি প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।”

মহাসড়কে নির্দিষ্ট দূরত্বে গাড়িচালক ও যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেট এবং খাবার দোকান রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

মান্নান জানান, সরকারি চাকরিতে পদ সৃজন ও নিয়োগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে শিগগিরই তিনি দিক-নির্দেশনা দেবেন।

বুধবারের সভায় মোট ১২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-

>> পায়রা নদীর উপর লেবুখালী সেতু (সংশোধিত) নির্মাণ প্রকল্প।

>> ঢাকা শহরে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

>> চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প।

>> কুড়িগ্রামের চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীরে ভাঙনরোধ প্রকল্প।

>> সোনাগাজী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প।

>> আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন প্রকল্প।

>> কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প।