সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশকে উপরে তুলতে ‘বিশেষ কর্মসূচি’

বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলতে সরকার বিশেষ কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2019, 02:45 PM
Updated : 26 Feb 2019, 02:45 PM

মঙ্গলবার বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা জান তিনি।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পোর নেতৃত্বে বিশ্ব সংস্থার প্রতিনিধি দলটি শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাতে যায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “তারা দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বনিম্ন শতকরা ৫ জন আছেন, যারা অসীম দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত ওদেরকে টেনে আনার জন্য একটা প্রচেষ্টা চলছে। সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

মিয়া সেপ্পো বলেন, “মন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন যে সরকার হতদরিদ্রদের মধ্যে নিচের দিকের ৫ শতাংশ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে নিয়ে আসার টার্গেট নিয়েছে।

চলমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিকে আরও মানসম্পন্ন উপায়ে বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার মান বাড়িয়ে এই লক্ষ্য অর্জনের কথা মন্ত্রী বলেছেন জানিয়ে জাতিসংঘ কর্মকর্তা বলেন, “এসব লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।”

মান্নান বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের যে নিরাপত্তা বলয়টা আছে সেটা তো চলছে। এর বাইরে একটা সার্ভে চলছে। এটা পাওয়ার পরে আমরা কাজ শুরু করব। সবচেয়ে কষ্টে যে আছে তাকে আমরা ধরতে চাই।”

তিনি জানান, সরকার গত ১০ বছর ধরে যে উন্নয়ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে, তার ফল ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে তাতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই।

“এই কৌশল নিয়েই আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে যাব, এরপরে আমাদের দারিদ্র্য দূর হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে বিনিয়োগ নিয়ে একটা প্রশ্ন এসেছিল, আমরা তাদের বলেছি বিনিয়োগ আমরা চাই, কিন্তু যে কোনো মূল্যে নয়। আমাদের বরঞ্চ ওই বিনিয়োগ পছন্দ, যেটা আমাদের দেশজ, দেশের ভেতর থেকে উঠে আসবে।

“প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি পরিবারে, ছোট দোকানদার, কিছু গৃহস্থ তার জমিতে চাষবাস করছে, গরু পালছে, ছাগল পালছে, হাঁস পালছে। তাদের প্রত্যকে যদি নিজেদের উৎপাদন একটু বাড়ায়, তাহলে আমাদের (উৎপাদন) অনেক বাড়বে। ওখানেই বিনিয়োগ।”

গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রাথমিক শিক্ষা ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিয়ে গেছি। এগুলো দিয়ে আমরা আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করেছি।

“আমরা কাজ করব আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে; আমাদের স্বকীয়তা, নিজস্ব কৌশল, নিজস্ব বাস্তবতা, সেগুলোকে ধরে নিয়েই আমরা কাজ করব।”

বাংলাদেশের এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা জাতিসংঘ কর্মকর্তারাও করেছেন বলে জানান মান্নান।

তিনি বলেন, “তারা আমাদের প্রবৃদ্ধির মাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। আমরা স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে কী ধরনের খরচ করছি, এই বিষয়ে জানতে চেয়েছে।’

মান্নান বলেন, “তাদের মনে প্রশ্ন, আমাদের এই প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট চাকরি সৃষ্টি করছে কি না? আমরা স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় করছি, এটা যথেষ্ট কি না? সামাজিক সুরক্ষায় যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে কি না?”

মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

মিয়া সেপ্পো সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মূলত সরকারের অগ্রাধিকার এবং আমরা কীভাবে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারি, এসব বিষয়গুলো জানতেই পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”

জিডিপির যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার মান কীভাবে বাড়ানো যায় এবং তার মাধ্যমে কীভাবে যুব সমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা।