পোল্ট্রি শিল্পের বদনাম ‘কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে’

পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে এই সেক্টরের বদনাম হচ্ছে বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 03:24 PM
Updated : 25 Feb 2019, 03:24 PM

আর পোল্ট্রি বিজ্ঞান নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে কিছু কিছু খামারি অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্যকর পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ডিএলএস মহাপরিচালক।

ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন এর বাংলাদেশ শাখা এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল যৌথভাবে ‘পোল্ট্রি ফর হেলদি লিভিং’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনায় আগামী ৫ থেকে ৯ মার্চ পাঁচদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার এবং ১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পে নিরব বিপ্লব ঘটছে। বর্তমানে এইখাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলো হিসাব করলে এই অংক আরও অনেক বড় হবে।

“তবে কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে পুরো পোল্ট্রি সেক্টরের বদনাম হচ্ছে। তবে এই সংখ্যাটি শতকরা এক শতাংশেরও কম হবে। কয়েকদিন আগে সাভার থেকে ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা পোল্ট্রি ফিড জব্দ করা হয়েছে। গতকালকেও একটি কোল্ড স্টোরেজ থেকে মেয়াদ উত্ত্বীর্ণ ভেকসিন উদ্ধার করা হয়েছে। পোল্ট্রি খাদ্যের মান বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ব্রয়লার মুরগি ও ডিম নিয়ে বাজারে অপপ্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ভোক্তা ও গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কে খামারিদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে খামার না করার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে।

“প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও ওষুধের দোকানে গেলেই এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। ড্রাগ অথরিটিকে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে,” বলেন তিনি।

ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, উন্নয়ন ও সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হলে পোল্ট্রি শিল্পের আরও বিকাশ প্রয়োজন। এই খাতকে বড় কোম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বেশি মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ডিম-মুরগি যেন সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।

“নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ এন্টিবায়োটিক মুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করবে বাংলাদেশ,” বলেন খালেদ।

বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার বলেন, তথ্য বিভ্রাটের কারণে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এতে সাধারন মানুষ ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাই সংবাদ পরিবেশনের আগে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অহেতুক আতঙ্কের কারণ না হয়।

১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো

ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারন সম্পাদক মাহাবুব হাসান জানান, আগামী ৫-৬ মার্চ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার’ এবং ৭, ৮ ও ৯ মার্চ বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে ‘১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো’ অনুষ্ঠিত হবে।

সেমিনারে মোট ৯৯টি সায়েন্টিফিক পেপার উপস্থাপন করা হবে।  পোল্ট্রির পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা এবং পোল্ট্রি ব্রিডিং ও জেনেটিকস বিষয়ে ১৩জন বিজ্ঞানী ও গবেষক এবার বাংলাদেশে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের ২২টি দেশের প্রায় ২৩০টি কোম্পানি এবারের পোল্ট্রি শোতে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।