ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নন অর্থমন্ত্রী

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের আপত্তির পরও নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদনে কোনো সমস্যা দেখছেন না অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2019, 09:25 AM
Updated : 18 Feb 2019, 09:28 AM

তিনি বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায়োজন মনে করেছে বলেই নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। সেবার মান ঠিক থাকলে ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নন তিনি।

২০১২ সালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পর সমালোচনা হয়েছিল।

এরপর গত কয়েক বছর ধরেই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, আর্থিক কেলেংকারি, অনিয়ম আর তারল্য সঙ্কটের কারণে বারবারই আলোচনায় এসেছে দেশের ব্যাংক খাত।

তারপরও গত সরকারের সময় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের চাপ ছিল।, যদিও আগের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মাল আবদুল মুহিত, ব্যাংক খাতের ‘আকার বড় হয়ে যাওয়ায়’ তা ‘সংকোচনের’ কথা বলেছিলেন। 

আর অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা দেশে নতুন কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই বলে আসছিলেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রায় দেড় মাসের মাথায়ই ‘বেঙ্গল’, ‘পিপলস, ও ‘সিটিজেন’ নামের নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। এই তিনটিসহ দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬২তে উন্নীত হতে যাচ্ছে।

নতুন তিন ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

সচিবালয়ে সোমবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে নতুন ব্যাংক নিয়ে প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “আমি এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলব না, তিনটি ব্যাংক সম্বন্ধে আমাকে জানতে হবে। গভর্নর মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করলে আমরা তথ্য পাব, তখন কথা বললে ভালো হবে।”

তবে পরক্ষণেই তিনি বলেন, “সেন্ট্রাল ব্যাংক ডেফিনেটলি প্রয়োজন না থাকলে এ কাজ (নতুন ব্যাংক অনুমোদন) করত না। তাদের হয়ত বিশ্লেষণ আছে, প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন এবং সেই প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে হয়ত তারা করে থাকতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও আলাপ করিনি, আলাপ করে জানাব।”

নতুন করে বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদনের বিপক্ষে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত। কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব আসার কিছুদিনের মধ্যেই কেন ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ল?

এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে কয়টা ব্যাংক আছে এটা বড় ব্যাপার না। ব্যাংকগুলো যদি স্বাভাবিকভাবে চলে, নিয়মনীতি মেনে চলে এবং যা ব্যাংক আছে… সংখ্যা দিয়ে কোনো কিছু হবে না। ব্যাংকের কার্যক্রম যদি থাকে, যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক করা, কাস্টমারদের যদি সার্ভিস দিতে পারে এবং নিয়মের মাঝে দিতে পারে, অনিয়মের মাঝে না, তাহলে ইন দ্যাট কেইস নম্বর নিয়ে আমি চিন্তিত না।

“৫০টি না করে আপনি বড় একটা করেন সেই একই কথা হল। আমি মনে করি, নম্বর দিয়ে না, আমাদের চাহিদা আছে কি না… যদি চাহিদা নিরূপণ করে করা হয়ে থাকে ইন দ্যাট কেইস ফাইন। আমার বিশ্বাস সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা সবাই কমপ্লিটলি একটা স্টাডি করে সেই স্টাডির ভিত্তিতেই তারা কাজটি করেছেন।”

নতুন ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে পেইড আপ ক্যাপিটাল ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করায় সমর্থন দেন তিনি।

“আস্তে আস্তে যদি তারা বাড়িয়ে নেয় দ্যাট কেইস সেক্টরটা বড় হয়, আমার মনে হয় সেই উদ্দেশ্যেই তারা করেছেন। স্লোলি বা গ্রাজুয়ালি বাড়াতে পারে ইন দ্যাট কেইস সেটা ভালো হবে।”

ক্লাসিফাইড লোনকে ব্যাংকের সমস্যা উল্লেখ করে এই লোনগুলা কীভাবে ক্লাসিফাইড হয়েছে তা দেখতে শিগগিরই স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ক্লাসিফাইড লোন আশির দশক থেকে হয়ে আসছে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “আমার মনে হয় প্রথমে ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ যত বেশি হয় ব্যাংক ইস্টারেস্ট বেড়ে যায়, স্প্রেডটা বেড়ে যায়, এগুলো কমাতে হবে, সেজন্য ক্লাসিফাইড লোনে হাত দিতে হবে।

“দেখতে কীভাবে লোনগুলা ক্লাসিফাইড হল, সেগুলো দেখার জন্য আমরা শিগগিরই স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করছি, আপনারা দেখতে পাবেন আমরা স্পেশাল অডিট করে কথা বলব।”