বৈষম্য কমাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জরুরি: পরিকল্পনামন্ত্রী

সমাজে বৈষম্য কমাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2019, 03:10 PM
Updated : 16 Feb 2019, 03:10 PM

তিনি বলেছেন, “সত্যি কথা বলতে কি আমাদের দারিদ্র্য কমেছে। আগে দুই জনে একজন গরিব মানুষ ছিল, এখন পাঁচ জনে একজন। এটা আমাদের একটা বড় সাফল্য। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। দারিদ্র্য আরও কমাতে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ড এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে।”

শনিবার রাজধানীর গুলশানে লেকসোর হোটেলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে এক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী মান্নান বলেন, “এ কথা ঠিক যে আমাদের কিছু মানুষের হাতে বেশিরভাগ সম্পদ চলে গেছে। সমাজে বৈষম্য-অবিচার-বঞ্চনা আছে স্বীকার করছি। এসব আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর মাধ্যমেই দূর করতে হবে।”

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) ‘২০১৯ ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সামিট’ শীর্ষক এই সম্মেলন আয়োজন করে।

বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে পরিকল্পণামন্ত্রী বলেন, জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা এবং মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটালি অর্থ ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

তবে ‘ডিজিটাল দুর্নীতি’ কমাতে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তির বিষয়ে আমরা যেমন স্মার্ট, যারা  ডিজিটাল দুর্নীতি করে তারাও স্মার্ট। কেবল আমাদের দেশে নয়, অন্য দেশেও ডিজিটাল দুর্নীতি হয়।

“কিন্তু আমাদের ব্যথা একটু বেশি লাগে কারণ আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় গরিব। ডিজিটাল দুর্নীতি দূর করতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এখন নিজেদের ও বাইরের প্রযুক্তি এনে ব্যাংকের টাকা চুরি ঠেকাব। সরকারের কান খাড়া আছে। আমরা সতর্ক ।”

জনকল্যাণে কাজ করার বাধা তুলে ধরে মান্নান বলেন, “আমাদের একটা গ্যাপ আছে; গ্রামে যাবে না, অথচ সেখানে চাকরি আছে। অনেকে আছে গ্রামে কাজ করবে না। আবার কিছু তরুণ-তরুণী আছে তারা বিদেশে চলে যায়। তরুণদের ব্যথা আছে, এটা আমরা বুঝি। বিদেশে গেলে তারা বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এটা মনে করে।”

বিদেশে চলে যেতে ইচ্ছুক তারুণ্যকে আশার কথা শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, “দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, শিল্পায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশেই প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশ থাকলে তরুণদের বিদেশে যাওয়া লাগবে না; দেশেই তারা নানা সুবিধা পাবেন।”

গ্রামীণ জনপদে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে। এটাকে মোকাবেলা করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামে টাকার সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন ব্যাংককে বলছি, গ্রামে শাখা খুলতে হবে।”

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ইনোভেশনস ফর প্রোভাট্টি অ্যাকশনের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিরেক্টর রেবেকা রোজ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফার্ন সফটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেবি ওয়াটকিনস।

স্বাগত বক্তব্য দেন ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক জহিরুল হক, গ্রীন ডেলটা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, আশরাফুল আলম, জাতিসংঘের ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের কান্ট্রি প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আশরাফুল আলম, গ্রামীণফোনের সাবেক চেয়ারম্যান খালিদ শামস, ইউল্যাবের গবেষণা বিভাগ সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ ল্যান্ড সোসাইটির পরিচালক সাজিদ অমিত প্রমুখ।

ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য মিস তাহেরা হক সমাপণী বক্তব্য দেন।

বিকাশ এই সামিটের স্পন্সর পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা করে।