এনবিআরকে লক্ষ্য ‘চাপিয়ে দেবেন না’ অর্থমন্ত্রী

এনবিআরকে রাজস্ব আদায় করার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পক্ষপাতি নন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তিনি বরং চান এনবিআরই তা ঠিক করুক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2019, 01:13 PM
Updated : 7 Feb 2019, 01:47 PM

বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার পর তিনি রাজস্ব আহরণের গুরুত্ব তুলে ধরেই সাংবাদিকদের কাছে নিজের এই অবস্থান তুলে ধরেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাজস্ব আহরণে ক্ষেত্রে আমরা ভবিষ্যতে বটম অব অ্যাপ্রোচ নেব। আগে যেমন এনবিআরের উপর চাপিয়ে দেওয়া হত, এখন এটা করব না। এখন এনবিআর ওয়ার্ক আউট করে বের করবে, তারা কত টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিতে পারবে।”

রাজস্ব আহেরণের সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআরকে আরও শক্তিশালী করতে ৪৯২টি উপজেলায় আয়কর অফিস স্থাপনের কথা বলেন তিনি।

চলতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য ঠিক হয়েছে, তা অর্জনে আশাবাদী মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস আমরা পূর্ণমাত্রায় অর্জন করতে পারব, যেভাবে আমরা অতীতেও করেছি। কারণ অতীতে আমরা ১৯ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এটা অনেক দেশেই হয় না।”

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন অর্থমন্ত্রী। এই বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গভর্নর ফজলে কবিরও বৈঠকে ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এমসিসিআই সভাপতি সভাপতি নিহাদ কবির, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, স্কয়ার ফার্মাসিউক্যালসের অন্যতম কর্ণধার তপন চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বৈঠকে অংশ নেন।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘হতাশা’ দেখার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেকবারই তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে সরকার তা পুরোপুরি পূরণ করে না।”

ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া শুনে তিনি বলেন, “আমি নোট নিয়েছি। আমাদের দায়িত্ব এখন এগুলো দেখা এবং এগুলোর উপর কাজ করা। প্রধানমন্ত্রী অলরেডি নির্দেশনা দিয়েছেন, আমাদের কীভাবে এগুতে হবে। এবার আমরা ইনশাল্লাহ তাদের সমস্যাগুলো দেখব এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদের হার এবং করহার নিয়ে বেশি কথা বলেছেন বলে জানান মুস্তফা কামাল।

“তাদের আশ্বস্ত করেছি যে আমরা এগুলো দেখব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কাউকে কষ্ট না দিয়ে কীভাবে আমাদের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। ব্যবসায়ীদের বলেছি আপনারা আমাদের চাহিদা পূরণ করবেন, আর একটা উইন-উইন সিচুয়েশনের মানসিকতা নিয়ে আমরা কাজ করব।”

এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার যে কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তা নিয়েও তাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী।

“ব্যবসা সহজীকরণ ব্যবসার মূল কাজের একটি। কত দ্রুত আমরা বিচ্যুতিগুলো দূর করে সঠিক পথে এগুতে পারি, সেই চেষ্টাই আমরা করব।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ব্যবসা সহজিকরণের বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনারা এক কোয়ার্টার দেখেন কী হয়। একটু সময় দেন।”

অনুষ্ঠানের পর এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যবসা সহজীকরণ, বহুস্তরে কর এবং অতিরিক্ত সুদের বিষয়ে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে বলেছি। তিনি আমাদের সমাধান করবেন বলে কথা দিয়েছেন। আমরা তার কথায় আস্থা রাখছি।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “এ মিটিংয়ের পর আর কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করবে না যে আমরা তাদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করছি না।”

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গ

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি আগেও বলেছি আজকেও বলছি, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। খেলাপি ঋণ আমরা কমাবোই। নাহলে ব্যাংকিং সেক্টর দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যাবে। সেটা আমরা করব না।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলোকে বলেছি, শর্ট টার্ম ডিপোজিট নিয়ে যেন লং টার্ম ঋণ না দেওয়া হয়।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার ঋণ অবলোপনের যে নীতিমালা জারি করেছে, তাতে খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কমবে। তবে প্রকৃতভাবে কমবে না। 

এ বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “রাইট অফ ইজ এ পার্ট অফ দ্য সিস্টেম এবং তা আমাদের করতে হবে। এটা প্রত্যেক দেশই করে। ভারত, মালয়েশিয়াসহ প্রত্যেক দেশই এটা করে।”

সঞ্চয়পত্র নিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছোট সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ খুবই উপকৃত হয়্। এগুলো হঠাৎ বন্ধ করা যাবে না।

“তবে এগুলো বেশিদিন চললে বিনিয়োগের ও ব্যাংকের উপর চাপ পড়বে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। ব্যাংক এবং ক্যাপিটাল মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে,” ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঙ্গিত দেন তিনি।