ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: অর্থমন্ত্রী

ব্যাংকের ঋণ খেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2019, 02:16 PM
Updated : 6 Feb 2019, 05:14 PM

অর্থ লোপাটে সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী মুস্তাফা কামাল বলেন, এদেশের ব্যবসায়ী দুই প্রকার। এক প্রকার হচ্ছে ব্যবসায়ী, আরেকটি গ্রুপ হচ্ছ ‘অসাধু ব্যবসায়ী’।

“যারা ঝুঁকি নিয়ে এদেশের ব্যবসার হাল ধরেছিলেন তারা হচ্ছেন ব্যবসায়ী। তারা সময়মতো ঋণ শোধ করেন। তারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে মাঝে মাঝে তারা হোঁচট খায়। সকল ব্যবসায় হ্যাজার্ড আছে। তাদেরকে অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে এক করা আমার মনে করি, এটা সঠিক না।”

‘অসাধু ব্যবসায়ীদের’ পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, “অসাধু ব্যবসায়ী হচ্ছেন তারা যারা ঋণ নিয়েছেন শোধ না করার জন্য। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল ঋণ শোধ করবে না। এদের জন্য কোনও রকম ছাড় নাই। এদেরকে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। 

“শুধু অসাধু ব্যবসায়ী না, তাদের সাথে আমরা যারা তাদের সাহায্য করেছি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন সেজন্য ‘অনেক সহ্য’ করবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা সাবধান সাবধান এবং সাবধান। অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কোনও ছাড় নয়।”

ব্যবসার নামে বিদেশে অর্থপাচার ঠেকাতে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মুস্তাফা কামাল বলেন, “আমরা এক্সপোর্ট এলসির বিপরীতে বিদেশে মাল পাঠাব-এই অঙ্গীকার করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলাম। এক্সপোর্ট হয়ে গেল, কিন্তু অর্থ ফেরত আসল না।

“ইনটেনশন ইজ ভেরি ক্লিয়ার। তারা আগেই জানত যে আসবে না।”

এই প্রক্রিয়ায় জনতা ব্যাংকের ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “এরা বার বার একই ব্যক্তি একই গ্রুপ বিভিন্ন নামে বা একই নামে টাকা নেবে একই কথা বলে, কিন্তু আমরা একবারও দেখলাম না যে. আগেরগুলো জমা হল কি না।

“১০ বার, ২০ বার, ৩০ বার টাকা দিয়েই যাচ্ছি, কিন্তু একবারও দেখব না যে আগে যা দিলাম তার খবর কী? সুতরাং আমি মনে করি, তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেছে।

“এবং সেখানে ড্রাস্টিক অ্যাকশন নিতে হবে।”

সময়ের প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “কঠিন সময়ে সহজ সিদ্ধান্ত নিলে আমরা ফেইল করব। জাতির কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা যেটা আছে সেই পরীক্ষায় পাশ করতে পারব না।”

ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম দূর করতে এখন থেকে প্রতিটি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা হবে বলে জানান মুস্তাফা কামাল।

“প্রতিটি ব্যাংকে স্পেশাল অডিট করা হবে। আমাদের জানতে হবে, কেন ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম হচ্ছে। এই অনিয়মের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে ব্যাংকারদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রকৃত দোষীরাই শাস্তি পাবে।”

মালয়েশিয়ায় আর্থিক খাতে কঠোর আইন প্রয়োগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “মালয়েশিয়া তাদের ঋণ খেলাপির তালিকা করে। কোনও ঋণখেলাপি দেশত্যাগ করার চেষ্টা করলে এয়ারপোর্টে গেলেই তাকে আটক করা হয়। তাদের দেশের টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়ে ফুর্তি করার ব্যবস্থা নাই।

“তারা অতটা কঠোর জায়গায় যাওয়ার কারণেই আজকে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে এই ডিসিপ্লিন আজকে আছে।”

বাংলাদেশেও সেই ব্যবস্থা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গভর্নর ফজলে কবির জানান, গত সেপ্টম্বরে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে তা ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

রূপালী ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গ্রামীণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ারও প্রশংসা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে এ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা লস করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই লস কাটিয়ে ৫০০ কোটি টাকা লাভ করেছে।

“বর্তমানে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩৭২ কোটি টাকা। এত কম মূলধন দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের কেউ ব্যবসা করতে রাজি হন না।”

ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।