লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে

আমদানি বাড়ার গতি কমায় বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও কিছুটা ‘স্বস্তি’ ফিরে এসেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2019, 05:24 PM
Updated : 3 Feb 2019, 05:25 PM

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটিতি ছিল ৫০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এ হিসেবে এই ছয় মাসে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে ৬৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

৯৭৮ কোটি (৯.৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড ঘাটতি  নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ।

তার আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমদানি বাড়ায় গত অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেশ বেড়ে গিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চলতি অর্থবছরে আমদানির সেই গতি খানিকটা কমেছে। সে কারণেই বাণিজ্য ঘাটতির পাশপাশি লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বুধবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

জাতীয় নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গিয়েছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

৩০ জানুয়ারি চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন তাতে তিনি বলেছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে দেখা যায় এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম হয়েছে; ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

“সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠা এর একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে।”

‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমার প্রভাব আমদানি খাতে পড়েছে’ জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ২৫ শতাংশের বেশি। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি ততোটা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। নির্বাচনের কারণে আমদানির গতি শ্লথ ছিল।

আহসান এইচ মনসুর

“গত অর্থবছরে সেভাবে আমদানি বেড়েছিল; এই অর্থবছরেও যদি সেভাবে বাড়ত তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্য়য় দেখা দিত। সেদিকটায় বাঁচা গেছে বলা যায়।”

বাণিজ্য ঘাটতি ৭.৬৬ বিলিয়ন ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৬ কোটি (৭.৬৬ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮৬২ কোটি ৮০ লাখ (৮.৬২ বিলিয়ন) ডলার।

আর পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ (১৮.২৬) ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল।

>> ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ২ হাজার ৭৮২ কোটি ৩০ লাখ (২৭.৮২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ১৬ কোটি ৩০ লাখ (২০.১৬ বিলিয়ন) ডলার।

>> এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৬ কোটি  ডলার।

>> সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি কমে ১৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছিল।

তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

>> ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৮৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার, এবার একই সময়ে সেই উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

>> গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ১৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই ছয় মাসে এফডিআই বেড়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

>> এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ২৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।