ভোটের আগে ঋণ প্রবাহ কমেছে ‘অনিশ্চয়তার শঙ্কায়’

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2019, 10:49 AM
Updated : 30 Jan 2019, 10:49 AM

বুধবার গভর্নর ফজলে কবির চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন তাতে তিনি বলেছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে দেখা যায় এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম হয়েছে; ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

“সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠা এর একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে।”

এছাড়া আমানত ও ঋণ সুদহারের যোগান ও চাহিদাভিত্তিক ওঠানামায় সাম্প্রতিককালে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের প্রবাহকে প্রভাবিত করছে কিনা-সেটা অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে স্পষ্ট হবে বলে জানান গভর্নর।

তবে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ লক্ষে্যর চেয়ে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।

তবে কর্মসংস্থান সৃজনমুখী উৎপাদনশীল কর্মকান্ডের অগ্রাধিকারযুক্ত খাতগুলোয় অর্থায়ন যোগানের পর্যাপ্ততার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিবীক্ষণ ও সমর্থন আগে থেকেই বজায় রয়েছে জানিয়েছেন ফজলে কবির।

গভর্নর তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে মুদ্রা ও আর্থিকনীতি কার্যক্রমের সামগ্রিক সফলতার প্রেক্ষাপটে নতুন মুদ্রানীতিতে বড় কোন পরিবর্তন আনার প্রয়োজন অনুভূত হয়নি।রেপো ও রিভার্স রেপো সুদ হার ৬ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে।

অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।তবে অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির গতিধারা বিবেচনায় নিয়ে নতুন মুদ্রানীতে জুন শেষে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের ৮ দশমিক ৫ এবং  ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে সংশোধন করে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯ এবং ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে জানান গভর্নর।

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি তার আগের মেয়াদের (জানুয়ারি-জুলাই, ২০১৮) মুদ্রানীতির মতোই ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার আশা করা করা হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার আশা করা করা হয়েছিল।

অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬  শতাংশে পৌঁছেছে।

আর পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) ডিসেম্বর  মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।