এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোয় নজর পরিকল্পনামন্ত্রীর

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 05:09 PM
Updated : 29 Jan 2019, 05:17 PM

মঙ্গলবার গুলশানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে পিআরআই।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে সব সময়ই কথাগুলো আসে যে, আমরা এডিপি খুব ধীরে বাস্তবায়ন করি বা এডিপি বাস্তবায়নের হার খুব ভালো না। এ বিষয়টিকে আমরা খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছি এবং আমার ব্যক্তিগত একটা লক্ষ্য- যে করেই হোক এখন যে হারে বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটা বেশ ভালোই, আমি চেষ্টা করব এই হারকে আর কিছুটা হলেও বাড়াতে।”

দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কলেজ ও ইউনিভার্সিটি সৃষ্টি করেছি। এগুলো থেকে ফলাফল আসতে কিছুটা দেরি হবে। তবে আশা করা যায়, এক সময় দেশের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা এগুলোর মাধ্যমে পূরণ হবে।

“এর বাইরে বিভিন্ন দেশে ছোট ছোট যেসব কাজের জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয় সেগুলোর জন্য আমরা ক্রাশ কোর্সের ব্যবস্থা করেছি, ক্রাশ কোর্সের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়ে থাকি।”

নতুন নতুন রপ্তানিপণ্য উদ্ভাবনে নজর দেওয়ার কথা জানান মন্ত্রী মান্না।

তিনি বলেন, “আমরা জানি আর এর উপর নির্ভরতা আমাদের অনেক বেশি। কিন্তু এখান থেকে আমরা টাকা পাচ্ছি। যার ফলে এই খাতের দিকে আমাদের মনোযোগটা বেশি। তবে আমরা ধীরে ধীরে আরো রপ্তানি খাতের উদ্ভাবনের দিকে যাব।”

সেমিনারে প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার ও পরিচালক আহমেদ এহসান।

প্রবন্ধে বলা হয়, “২০১৮ সালে বাংলাদেশ বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে, যা পৃথিবীর প্রথম দশটি অর্থনীতির একটি। এই প্রবৃদ্ধি মূলত এসেছে অনেক বেশি সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে, কিছুটা ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়ার কারণে এবং সবচেয়ে বেশি এসেছে ভোগ বৃদ্ধির কারণে। ”

তবে ভবিষ্যতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে অভিমত দিয়ে কারণ ব্যাখ্যায় প্রবন্ধে বলা হয়, “বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন একটি কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা ও চীন বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে- এটা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটা বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

“আমাদের দেশে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কিন্তু কমে যাচ্ছে অথবা বলা যেতে পারে যতটা বিনিয়োগ করার কথা ছিল ততটা বিনিয়োগ হচ্ছে না। আবার বিদেশ থেকে ও বিনিয়োগ আসছে না। যে হারে ইন্ডিয়াতে এবং ভিয়েতনামে বিনিয়োগ আসছে সেই হারে বাংলাদেশে আসছে না।”

যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি কর ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রবন্ধে।

ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, “ব্যাংকিং খাতে যে কোনো মূল্যে কুঋণ বা খারাপ ঋণ বা যেসব ঋণ দিয়ে ফেরত পাওয়া যায় না, এ ধরনের ঋণ এর মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

“আর কমিয়ে আনার পদ্ধতি হতে হবে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে বেশি বেশি ঋণ না দিয়ে বরং ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া। কারণ এক প্রতিষ্ঠানকে বেশি ঋণ দিলে এর ফলে যদি কোনো কারণে ব্যবসাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ওই ঋণটি বড় ধরনের ঝুঁকির নিচে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই একই পরিমাণ টাকা যদি ১০ জনকে দেওয়া হয় তাহলে একই সাথে ১০ জন লোকসান করার সম্ভাবনা কিন্তু খুবই কম।”

সরকারি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে লাগাম টানারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।