চালের দরের সাময়িক বৃদ্ধি ‘ভোটের কারণে’

চালের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই দাবি করে চালকল মালিকরা বলছেন, মাঝে সাময়িক দাম বৃদ্ধি ছিল ভোটের সময় সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2019, 04:45 PM
Updated : 10 Jan 2019, 04:46 PM

নির্বাচনের পরপরই চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে নতুন সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৃহস্পতিবার খাদ্য ভবনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন।

চালকল মালিক সমিতি ও চাল ব্যবসায়ী সমিতিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সারাদেশ থেকে আসা চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

বাংলাদেশ অটোমেইল অ্যান্ড হাস্কিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ধানের দামও বাড়েনি, চালের দামও বাড়েনি।

“ভোটের সময় একটু গ্যাপ ছিল। সবাই ভোটের মাঠে ছিল। সেই সময় হয়ত ধানের আমদানি কমেছে, চাল উৎপাদন কমেছে। এটা এক দিনের বা দুই দিনের হতে পারে।”

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি নিধর বরণ সাহা চন্দন বলেন, “দাম বাড়ার যে কথা বলা হয়েছে এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্র দেশে তৈরি হয়নি। নির্বাচনের কারণে কোনো কোনো জায়গায় কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছিল।”

এতে কোনো কোনো অঞ্চলে কিছুটা দাম বাড়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

“কিন্তু যে সমস্ত উৎপাদিত মোকাম আছে যেমন দিনাজপুর, নওগাঁ, বগুড়া, শেরপুর, আশুগঞ্জ, কুষ্টিয়া; এসব মোকামে চালের দামের একটুও পরিবর্তন হয়নি।”

লায়েক আলী বলেন, “চালের দাম কোথায় বেড়েছে, এটা আমাদের জানা দরকার।

“যারা বলছে চালের দাম বেড়েছে, তাদের আমি অনুরোধ করতে চাই, আসুন নওগাঁ, আসুন কুষ্টিয়া, আসুন দিনাজপুর-শেরপুরে। কার কত চাল লাগবে?”

চালের দাম বাড়া নিয়ে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মদিনা রাইস মিলের মালিক লায়েক আলী জয়পুরহাট জেলার চালকল মালিক সমিতিরও সভাপতি।

সভায় সূচনা বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার বলেন, এ বছর আমন ও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নাই। তারপর খুচরা বাজারে দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা কেন বাড়ল?

খাদ্যমন্ত্রী জানতে চাওয়ার পর জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা তাদের মতামত জানান।

লায়েক আলী বলেন, সরকার ৬ লাখ মেট্রিক টন আমন চাল কিনবে। সরকারি দর ৩৬ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো জায়গায় ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজির বেশি মোটা চালের দাম নেই। সরকার প্রতিদিনই কিনছে।

মজুদ তলানীতে ঠেকে যাওয়ার পর এখন চাল আমদানি বাড়াচ্ছে সরকার; চাল আসছে ভারত থেকেও

তবে চিকন চালের দাম উঠা-নামা করে বলে স্বীকার করেন এই চালকল মালিক।

তিনি বলেন, গত দুই দিনে মোটা ও মাঝারি ধানের দাম মণে ৫০ টাকা কমে গেছে।

“আমরা চাল রাখতে পারছি না। কৃষকের ধান কিনতে পারছি না। কৃষক সর্বোচ্চ ৭৮০ থেকে ৭৯০ টাকা মণে ধান বিক্রি করছে। সেই ধানের দামও সাড়ে ৭শ টাকায় নেমে এসেছে।

“আমাদের ভেবে দেখতে হবে কৃষককে আমরা উৎসাহিত করব কি না? দাম বাড়ার এই প্রোপাগান্ডা কারা করছে, কারা মিলারদের বিতর্কিত করছে, তা ভাবার সময় এসেছে।”

‘আপদকালীন মজুদ’ রাখতে সরকারকে চাল ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন তিনি।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি নিধর সাহা বলেন, মোকামে বৃহস্পতিবারের চিকন চালের মূল্য ছিল কেজি প্রতি ৪৭ টাকা ৮০ পয়সা আর মোটা চালের দাম ২৮ থেকে ৩০টাকা।

চিকন চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন চিকন চালের মৌসুম নয়। এপ্রিল মাসে চিকন ধানের মৌসুম এবং তখন চালও পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে। তাই চিকন চালের দাম কিছুটা বাড়া স্বাভাবিক।

“মোকাম থেকে বা নদীর ওপার থেকে চাল রাজধানীতে আনতে মোকামের মূল্যের সঙ্গে ৫ থেকে ৬ টাকা পার্থক্য হওয়া স্বাভাবিক।”

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “নভেম্বর মধ্যে আমন ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। আর আমাদের (সরকার) চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত যদি ডিসেম্বরের শেষে দিকে বা মাঝামাঝি নিতে হয়। তাহলে প্রান্তিক চাষিরা কিছুতেই ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে না। এটা কিন্তু আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয়কে মাথায় নিতে হবে।

“১ ডিসেম্বর কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয় এই তারিখ আরও এগিয়ে আনতে হবে। কারণ নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ধান কাটাই শেষ হয়ে যায়। মাঠে কোনো ধানই থাকে না।”

গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয় লাখ টনেরও বেশি আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

এ বছর প্রান্তিক কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পায়নি বলেও মন্তব্য করেন কৃষক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার।

তিনি বলেন, “কৃষক, চালকল মালিক, চাল ব্যবসায়ী ও আমরা সবাই ভোক্তা। তাই সবার সমন্বয়ে সোনার বাংলা গড়তে চাই।”

উত্তরবঙ্গের সন্তান হিসেবে ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে নতুন মন্ত্রী বলেন, “আমি অনুরোধও করতে পারি এবং দাবিও করতে পারি যে আপনারা আমাদের ইজ্জত রাখবেন। ”

তার এই কথায় সব ব্যবসায়ী বলে ওঠেন, তারা মন্ত্রীর ‘সঙ্গে আছেন’।

খাদ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়ে বলেন, “প্রকাশিত হওয়ার আগেই যদি আমাদের বলেন যে এই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, আপনারা একটু সাবধান হন…। পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়ে  গেলে অনেকে অনেক ধরনের সুযোগ নিয়ে ফেলে।”

কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত এবং ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখার বিষয়টি ধরে সাধন মজুমদার বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনটি একটি ‘চ্যালেঞ্জ’। এই ‘চ্যালেঞ্জ’ জয়ে সবার সহযোগিতা দরকার।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “এতক্ষণ যাদের বক্তব্য শুনেছি তারা অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী। আমরা দুজনও উত্তরবঙ্গের মানুষ। আমাদের সফলতা উত্তরবঙ্গেরই সফলতা।”

“আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। আপনারা আপনাদের ব্যবসা করবেন। যাতে মানুষের ভোগান্তি এবং কোনো অবস্থাতেই খাদ্য নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হয়,” চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ী টিপু মুনশি।