১৫ শতাংশ রেমিটেন্স বেড়েছে বিদায়ী বছরে

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হল ২০১৮ সাল।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2019, 04:23 PM
Updated : 1 Jan 2019, 04:38 PM

গেলো বছরে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ (১৫.৫৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। এই অংক ২০১৭ সালের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

‘রেমিটেন্সের এই বৃদ্ধি শেখ হাসিনার সরকারের আরেকটি সাফল্য’ দাবি করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েক বছরে আমরা জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।”

আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

“বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা শেখ হাসিনার সরকার টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণেই হয়েছে। আর এ উন্নয়নের জন্যই আমাদের ভোট দিয়েছে জনগন।

 

শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এই পাঁচ বছরে আমরা অসাধ্য সাধন করতে পারব। রেমিটেন্সসহ সব ক্ষেত্রেই তার ছোঁয়া লাগবে।”

রেমিটেন্স বাড়াতে মার্কিন ডলার-টাকার বিনিময় হার ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে এ দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম।

তথ্য দিয়ে এই গবেষক বলেন, গত ছয় মাসে ভারতীয় মুদ্রা রূপির বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে দশমিক ১৮ শতাংশ মাত্র।

“রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়াতে খুব শিগগিরই ডলালের দর ৮৫ টাকায় ‘স্থির’ করে দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবাসীরা ৬২৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি হলেও সর্বশেষ নভেম্বর মাসে গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩ শতাংশ রেমিটেন্স কম পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

আর অক্টোবরের চেয়ে নভেম্বরে রেমিটেন্স কমেছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। রেমিটেন্সের এই ধীরগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়নেও (রিজার্ভ) টান পড়েছে।

রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নামেনি।

টাকার বিপরীতে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

তবে গত অর্থবছরের মতো এবার ‘ভালো’ প্রবৃদ্ধি হবে না বলে আশংকা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৭৪৮ কোটি ৮৪ লাখ (৭.৪৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

বছরের প্রথমার্ধে অর্থ্যাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ৮০৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।

বিদায়ী বছরে সবমলিয়ে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে ২০১৮ সালে আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, গেলো বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১২০ কোটি ২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

গত বছরের ডিসেম্বরে ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের হিসাবে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের বেছে ৮ শতাংশের বেশি রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল।

রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাশুল কমানোর সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছর রেমিটেন্স বাড়ে। খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে।

বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।