ছয় মাসে ১.১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2018, 02:15 PM
Updated : 29 Dec 2018, 05:28 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১১৩ কোটি ৪০ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে।

বছরের শেষ কার‌্যদিবস বৃহস্পতিবারও ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২৮ মিলিয়ন) ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আমদানি বাড়ায় বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদার সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলো আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে।সে কারণেই বাজারে অস্থিরতা চলছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই অস্থিরতা দূর করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে চলেছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা একটা স্বাভাবিক বিষয়। বাজারে যখন ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায় তখন কেনা হয়। আবার যখন চাহিদা বেড়ে যায় তখন বিক্রি করা হয়।

“এখন সেটাই করা হচ্ছে।”

সাপ্তাহিক ছুটি, জাতীয় নির্বাচন এবং ব্যাংক হলিডের কারণে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর টানা চার দিন (শুক্রবার থেকে সোমবার) সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে।

সে কারণে ২৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ছিল ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবস।

আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ওইদিন ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। দুই মাস ধরে এই দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে।

ছয় মাস আগে ২৮ জুন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ হাজার ৭২ পয়সা। এক বছর আগে ছিল ৮২ টাকা ৭০ পয়সা।

আমদানি পর্যায়ে ‘নির্ধারিত’ এই দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় অক্টোবরে নয়টি ব্যাংককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের নভেম্বরে একই অভিযোগে ২০টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সুষ্পষ্ট জবাব না দেওয়ায় কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানাও করা হয়েছিল।

বর্তমান বিশ্ববাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডলার-টাকার বিনিময় হার ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে এ দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম।

তথ্য দিয়ে এই গবেষক বলেন, গত ছয় মাসে ভারতীয় মুদ্রা রূপির বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে দশমিক ১৮ শতাংশ মাত্র।

“রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়াতে নতুন বছরের শুরুতেই ডলালের দর ৮৫ টাকায় ‘স্থির’ করে দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।”

বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি এবং বন্যার কারণে চাল আমদানি বাড়ায় গত অর্থবছরে আমদানি খরচ বেশ বেড়ে গিয়েছিল

চলতি অর্থবছরের শুরুতেও তা অব্যাহত ছিল।গত দুই মাস ধরে আমানিতে ধীরগতি চলছে বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে বেড়েছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এবার আকুর বিল ১১৫ কোটি ডলার

নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে আকুর বিল হয়েছে ১১৫ কোটি ডলার। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এই বিল পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।

এর আগে আগে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদে আকুর বিলেল পরিমাণ ছিল ১১০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।