ভোটের আগে রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফের তিন হাজার ২০০ কোটি (৩২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2018, 06:31 PM
Updated : 28 Dec 2018, 07:27 AM

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। ২০১৬ সালের  ১ সেপ্টেম্বর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ঐ বছরেরই ৪ নভেম্বর ছাড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার।

২০১৭ সালের ২২ জুন রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। মাস দুয়েকের মধ্যে তা আরও বেড়ে ৩৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে উটে। আর ওটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসে। এরপর আর ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি।

আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসে। গত নভেম্বরে তা ৩১ বিলিয়ন ডলারেরও নীচে নেমে যায়।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ায় ভোটের আগে সেই রিজার্ভ আবার ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।

জাপানি তামাক কোম্পানি জাপান টোব্যাকো (জেটি) গ্রুপ বাংলাদেশে আকিজ গ্রুপের মালিকানায় থাকা ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেডকে (ইউডিটিসি) কিনে নেওয়ার ৫৬ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হওয়ায় বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করায় পেছনে অবদান রেখেছে।

১৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে জাপানী কোম্পানি জেটি ইউডিটিসিকে কিনে নিয়েছে অক্টোবরে। নভেম্বরের শেষে ঐ অর্থের মধ্যে ৫৬ কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে।

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো আকুর আমদানি বিল বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছিল।

এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভ ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। তখন আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত।

রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না- এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেওয়া হয়েছিল তখন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।

১.১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ায় চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১১৩ কোটি ৪০ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবারও ২৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এবার আকুর বিল ১১৫ কোটি ডলার

নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে আকুর বিল হয়েছে ১১৫ কোটি ডলার। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এই বিল পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।

এর আগে আগে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদে আকুর বিলেল পরিমাণ ছিল ১১০ কোটি ডলার।