রেমিটেন্সে ধীরগতি, রিজার্ভে টান

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবাসীরা ৬২৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 01:34 PM
Updated : 2 Dec 2018, 01:45 PM

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি হলেও সর্বশেষ নভেম্বর মাসে গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩ শতাংশ রেমিটেন্স কম পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

আর অক্টোবরের চেয়ে নভেম্বরে রেমিটেন্স কমেছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। রেমিটেন্সের এই ধীরগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়নেও (রিজার্ভ) টান পড়েছে।

রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে নামেনি।

টাকার বিপরীতে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

তবে গত অর্থবছরের মতো এবার ‘ভালো’ প্রবৃদ্ধি হবে না বলে আশংকা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৬২৮ কোটি ৬৩ লাখ (৬.২৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে এসেছে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

গত বছরেরর জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশে ৫৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। এই হিসাবে পাঁচ মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ৯ শতাংশ।

তবে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ৩ শতাংশ কম রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই রেমিটেন্স ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

গত অর্থবছর ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি, কারণ তার আগের বছর রেমিটেন্স অনেক কম এসেছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্সে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও তা অগাস্টে থাকেনি। সেপ্টেম্বর ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও অক্টোবর-নভেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

“আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি হবে। তরেব গত অর্থবছরের মত ভালো প্রবৃদ্ধি এবার নাও হতে পারে। রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হলে যেসব ভাই-বোনদের আমরা বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছি, তাদের অবশ্যই দক্ষ করে পাঠাতে হবে।

“পাশাপাশি তারা যেন কোনো ঝামেলা ছাড়া কম খরচে দ্রুত টাকা দেশে পাঠাতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাশুল কমানোর সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছর রেমিটেন্স বাড়ে। খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে।

বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।

রিজার্ভে টান

রেমিটেন্সের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে। রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।

আমদানি বাড়ার কারণেও রিজার্ভে চাপ পড়েছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে তা বেড়ে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উঠে। ৩১ অক্টোবর তা কমে ৩২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে গত বছরের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন ৩৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল।

তারপর থেকে রিজার্ভ নিম্মমুখি।