বিজেএমসির ব্যয় কমানোর পরামর্শ

পাটশিল্পকে রক্ষায় আধুনিক ও নতুন পাটশিল্প স্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন একটি সেমিনারের আলোচকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2018, 02:27 PM
Updated : 25 Nov 2018, 02:27 PM

তারা বলছেন, ‘প্রয়োজনের বেশি’ উচ্চ বেতনের কর্মকর্তাদের ভারে রুগ্ন হয়ে পড়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ-বিলস আয়োজিত ‘পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এই অভিমত দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, “সরকারের অধীনে শিল্প-কারখানা লাভজনক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নবায়িত সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব গ্রহণ করা যায়। যেমন সম্প্রতি চীন বলছে, বিড়ালের রং যাই হোক দেখতে হবে সে ইঁদুর ধরতে পারে কি না।

“অর্থাৎ সরকারি বা বেসরকারি যেভাবেই হোক শিল্পকে লাভজনক করাই উদ্দেশ্য। তবে আমি মনে করি, বর্তমানের পাট শিল্প অতি পুরনো হয়ে গেছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী এসব পুরনো শিল্প আধুনিক উৎপাদন দিতে সক্ষম নয়। তাই পাট শিল্পগুলোকে সংস্কার বা বিএমআরই না করে সম্পূর্ণভাবে নতুন শিল্প প্রতিস্থাপন করতে হবে।”

পাট শিল্পকে বাঁচাতে হলে এর ব্যয় কমানো আবশ্যক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“এজন্য লোকবল কমাতে হবে। কারণ এখন সকল ধরনের কর্মীর বেতন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন শিল্প স্থাপন করা হলে আগের অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে সমান উৎপাদন হবে। তাই নতুন শিল্প প্রতিস্থাপন করা ছাড়া এর সমাধান নেই বলে আমি বিশ্বাস করি,” বলেন এমএম আকাশ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “বিজেএমসির চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা। অনভিজ্ঞ এসব কর্মকর্তাদের কারণে ভুল পরিকল্পনা, অপব্যয়, দুর্নীতি-লুটপাট এমনকি অনভিপ্রেত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শ্রমিকদের মজুরি, অবসরপ্রাপ্তদের গ্রাচুইটি এবং পিএফসহ সামগ্রিক পাওনা প্রদানে ব্যর্থ হয় বিজেএমসি।

“তাই এই মাথামোটা প্রশাসন বিজেএমসি থেকে কাটছাঁট করে ব্যয় কমাতে হবে।”

তিনি বলেন,  “পাশাপাশি বিজেএমসির বিদ্যমান শিল্পগুলো প্রায় শত বছরের পুরনো। এসব শিল্প এখন অচল।”

তাই পাটশিল্পকে বাঁচাতে নতুন ও আধুনিক শিল্প প্রতিস্থাপন করতে সরকারের কাছে পরামর্শ রাখেন সহিদুল্লাহ চৌধুরী।

সেমিনারে বিজেএমসির বিভিন্ন মিলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, একজন শ্রমিক একটি মেশিন অপারেট করে। সে হিসাবে শ্রমিক বেশি নয়। কিন্তু বিজেএমসিতে নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

“এভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করে বিজেএমসিকে একটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে ‍রূপান্তর করা হয়,” বলেন একজন।

এ পরিস্থিতি থেকে পাট শিল্পকে বের করে আনতে নতুন শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি গবেষণা করে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা।

বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বিজেএমসির বেশ কিছু শিল্প বন্ধ থাকার পরও নতুন নতুন পাটশিল্প অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। অথচ পাটের আধুনিক পণ্য উৎপাদন না থাকায় বহির্বিশ্বে পাটপণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।

“সরকারের কাছে এখন যে পরিমাণ পাট জমা আছে তা দিয়ে আগামী পাঁচ বছর পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। তাই আধুনিক শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে চাহিদাভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “পাট শিল্পকে বাঁচাতে বেসরকারিকরণ একটা সমাধান হতে পারে। বিজেএমসির অধীনে আর কোনও নতুন শিল্প করার কোনও যুক্তি নেই।”

একইসঙ্গে দেশের বাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ করে পাট পণ্য ব্যবহারের মতো নীতি প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় অনুষ্ঠানে।

বর্তমানে বিজেএমসির অধীনে কারখানা রয়েছে ৩২টি। এরমধ্যে চালু আছে মাত্র ২২টি। দশ হাজার ৮৩৫টি তাঁতের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে নয় হাজার ৫৫২টি; এক হাজার ২৮৩টি অকেজো। বিজেএমসিতে বর্তমানে মোট ৩৫ হাজার ৯৯২ জন জনবল কর্মরত রয়েছে।