বাণিজ্য যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রে পচছে সয়াবিন

যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষেত থেকে শস্য তুলে বড় সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা, ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্য যুদ্ধের মুখে চীনা ক্রেতা না থাকায় পাহাড়সম শস্যের স্তূপ কোথায় রাখবেন তারা।

>>রয়টার্স
Published : 21 Nov 2018, 05:13 PM
Updated : 21 Nov 2018, 05:21 PM

লুইজিয়ানার কৃষক রিচার্ড ফনটেনট ও তার প্রতিবেশীদের দিতে হয়েছে চড়া মূল্য। সব শস্য পচতে দিয়েছেন তারা।

এই মৌসুমে (শরৎ) নিজের সয়াবিন ক্ষেতের ১৭০০ একরের হাজার একরে চাষ করেছিলেন ফনটেনট। এখান থেকে তিন লাখ ডলার মূল্যের বীজ সংগ্রহ করতে পারতেন তিনি। তা না করে বীজওয়ালা গাছগুলো মাটিতে ফেলে রাখেন।

খারাপ আবহওয়ায় তার সয়াবিন বীজ এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার উপর এভাবে সংগ্রহ করায় তার অবস্থা আরও খারাপ হয়।

অন্য সময়ে তিনি সেগুলো স্থানীয় গুদামঘরে বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু এবার ওই গুদামগুলো এরইমধ্যে ভরে ওঠায় সে সুযোগও তিনি পাচ্ছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় সংরক্ষণাগার সাধারণত আন্তর্জাতিক শস্য ব্যবসায়ীরাই চালান, সেখানে শস্য মজুদও করেন তারা। কিন্তু এবার তারা ক্ষতিগ্রস্ত শস্য তেমন একটা কিনছেন না।

এই পরিস্থিতিতে সয়াবিন ক্ষেতের ওপর ট্রাক্টর চালিয়ে দেন ফনটেনট।

টেলিফোনে তিনি বলেন, “কেউ সেগুলো চায় না। এর বাইরে আর কী করা যায় তা আমি জানি না।”

তার মতো দুই ডজনের বেশি কৃষক, গবেষক ও কৃষদাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই কৃষকরা ক্ষেতে শস্য মাড়িয়ে দিচ্ছেন বা পরের বছর ভালো দামের আশায় স্তূপ করে রাখছেন।

তাদের ভাষ্য মতে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানোর ফল এটা। বাণিজ্য জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি কমেছে, অতিরিক্ত শস্যে ভরে গেছে সব সংরক্ষণাগার।

লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির কর্মীরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, লুইজিয়ানার ১৫ শতাংশের মতো তৈলবীজ ট্রাক্টর চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে বা সেগুলোর অবস্থা এত খারাপ যে তা বাজারে তোলার উপযুক্ত নয়। মিসিসিপি ও আরকানসাসের অনেক এলাকায়ও শস্য নষ্ট হচ্ছে। নর্থ ও সাউথ ডাকোটায় শস্যের স্তূপ ঢাকা পড়েছে তুষারে। ইলিনয় ও ইন্ডিয়ায় পশুর আক্রমণ থেকে শস্য ভরা ব্যাগ রক্ষায় লড়ছেন।

এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে আট কোটি ৯১ লাখ একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছিল, যা এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চীনে সয়াবিনের চাহিদা বাড়তে থাকায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সয়াবিনে বেশি লাভের আশা করেছিলেন কৃষকরা।

কিন্তু ওয়াশিংটন চীনা রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের পাল্টায় বেইজিংও যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এতে কার্যত চীনে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানি বন্ধই হয়ে গেছে, যেখানে গেল বছর প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার এসেছিল এ খাত থেকে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানির ৬০ শতাংশই হয় চীনে।

এদিকে কৃষকরা যাতে বাণিজ্য যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ এই তহবিলের ৮৩ কোটি ৭৮ লাখ বিতরণও করা হয়েছে।