নানা শর্তে বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৭৫ কোটি ডলার নিচ্ছে সরকার

জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো এবং ভ্যাট আইনের বাস্তবায়নসহ বেশ কয়েকটি শর্তে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা নিতে যাচ্ছে সরকার।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2018, 02:17 PM
Updated : 18 Nov 2018, 02:17 PM

সংস্থাটি চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে পরবর্তী তিন অর্থবছরে সমান ২৫ কোটি ডলার করে মোট ৭৫ কোটি ডলার দেবে। বর্তমান বিনিময়হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।

৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে ২ শতাংশ সুদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

যেসব শর্তে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।

এই ঋণ নিতে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ইআরডির বিশ্ব ব্যাংক উইংয়ের উপ-সচিব মির্জা আশফাকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোট তিন অর্থবছরের জন্য ৭৫ কোটি ডলার বাজেট সাপোর্টের জন্য আমরা বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন চুড়ান্ত করেছি। বিশ্ব ব্যাংক প্রতি অর্থবছরের জন্য ২৫ কোটি ডলার করে ছাড় করবে।”

তিনি বলেন, “এ সহায়তার জন্য বিশ্ব ব্যাংক যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো নিজে থেকে বাস্তবায়ন করার কথা বলে আসছে সরকার। এসব শর্ত পালন করলে বরং দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।”

বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার যে ঋণ নেয়, তা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি কোষাগারে জমা হয়। সেখান থেকে অগ্রাধিকার খাতে সরকারি এ অর্থ ব্যবহার করতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে থাকা একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজেট সহায়তার ঋণ পেতে সরকারকে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের সমন্বয় করতে হবে। ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর-মূসক) আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রের বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।”

মির্জা আশফাক বলেন, বিশ্ব ব্যাংক দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির শর্ত দিয়েছে। পোশাক খাত ছাড়া অন্য সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতের জন্য বন্ডেড ওয়্যার হাউজ তৈরির শর্ত এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য এক ছাদের নিচে সব সেবা দেওয়ার শর্তও দিয়েছে।

কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা করার শর্তও দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, এই বাজেট সহায়তার বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক সদর দপ্তরের সম্মতিও পাওয়া গেছে। তারা চূড়ান্ত অনুমোদন করার পর আগামী দুই মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

জায়েদ বখত

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে শর্তাধীনে বাজেট সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক সব দেশের জন্যই একসাথে নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলো গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে কোনো নীতি একটি দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও অন্য দেশের জন্য নাও হতে পারে। যেমন রপ্তানি খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক সময় জ্বালানিতে ভর্তূকি দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা বাড়ায়।

“কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের শর্তের মধ্যে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের শর্ত থাকলে তাহলে অবশ্যই এর দাম বৃদ্ধি পাবে। তখন আমাদের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”

“তাই বিশ্ব ব্যাংকের সকল শর্ত মানা উচিৎ নয় বলে আমি মনে করি,” বলেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

তিনি আরও বলেন, “দেশের অনেক বয়ঃজ্যেষ্ঠ বা অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আছেন যারা সঞ্চয়পত্রের লাভের টাকা চলেন। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটা করাও সরকারের উচিত হবে না।”

এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে সরকার ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নিয়েছিল।