ছুটির দিনে আয়কর মেলায় করদাতাদের ঢল

সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করদাতাদের ঢল নেমেছিল ঢাকার রমনা এলাকায়।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2018, 03:10 PM
Updated : 16 Nov 2018, 03:13 PM

করদাতাদের এই চাপ এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন মেলার আয়োজক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ, মু’মেন।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকেই করদাতাদের চাপে অফিসার্স ক্লাব মেলা প্রাঙ্গনে প্রবেশ কঠিন হয় পড়ে। পরে মেলা কর্তৃপক্ষ অফিসার্স ক্লাবের দক্ষিণ ও পূর্ব ফটক ধরে করদাতাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

এ সময় অফিসার্স ক্লাবের বেইলি রোডের দক্ষিণ গেইট ধরে সারিবদ্ধ মানুষের লাইন চলে যায় হেয়ার রোড পর্যন্ত। আবার অফিসার্স ক্লাবের পূর্ব গেইটের লাইনটি শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণির ফুটপাত ধরে মিন্টো রোডের মাথায় এসে থামে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকা লোকারণ্যে পরিণত হয়।

আগ্রহী করদাতাদের এই চাপ বেশ সাবলীলভাবেই সামাল দেয় মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ। দিনের প্রথমভাগ থেকেই চাপ সামাল দিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বেশ তৎপর দেখা যায়।তাদের কর্মব্যস্ততায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই করদাতাদের চাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

এরপর বেলা ১টায় জুমার নামাজের জন্য এক ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়। বেলা ২টা থেকে আবার আয়কর রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম শুরু হলে করদাতাদের চাপ অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।দিন শেষে মেলায় আগত প্রায় সবাইকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে এনবিআর’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মু’মেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার সকালে আমরা মেলা প্রাঙ্গনে এসে দেখতে পাই বেইলি রোড অফিসার্স ক্লাব এবং আশপাশের পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। কোথাও একটুও তিল ধারণের ঠাই নেই।

“আয়কর মেলার ইতিহাসে একদিনে এতো করদাতার উপস্থিতি আমি কখনোই দেখি নাই।”

শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলায় এসে ফরম পূরণ করছেন করদাতারা।

করদাতাদের চাপ কিছুটা কমার পর বেলা ৩টার দিকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “এবারের মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, অতীতের যে কোনও মেলার চেয়ে বেশি করদাতার উপস্থিতি। এরমধ্যে তরুণ করদাতারাই বেশি। আজকের রেকর্ড কারদাতাকে সেবা প্রদানে এনবিআরের সকল কর্মকর্তা মিলে সহযোগিতা করেছেন।”

তিনি জানান, এবার মেলায় মানুষের চাপ বাড়তে পারে- এ রকম ধারণা থেকে তারা আগে থেকেই একটি ব্যাংকের বুথ বাড়িয়ে রেখেছিলেন। তার সুবিধা আজ পাওয়া গেছে।

“এবার সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা ই-টিআইএন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। গত তিন দিনেই ১৫ হাজারের বেশি করদাতা ই-টিআইএন নিয়েছেন।”

ধরা পড়ার আগেই কর দেওয়া নিজের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে করদাতাদের সতর্ক করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা খুঁজে বের করার আগেই নিজেরা এসে আয়কর দিলে সবচেয়ে ভালো। না হলে পরবর্তীতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে আমরা বাড়ি, ফ্ল্যাট মালিক বা ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করব।”

মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে আসা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ওয়েব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. আব্দুল লতিফ পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্ভুলভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্যই আমি মেলায় এসে নিজেই রিটার্ন দাখিল করি। আমি গতবছর একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আয়কর দাখিল করেছিলাম। কিন্তু ওই আইনজীবী ভুলে ভরা রিটার্ন দাখিল করেছেন। এমনকি আমার এফডিআর পর্যন্ত দেখাননি। তাই এবার আমি নিজেই এসে নির্ভুলভাবে রিটার্ন দাখিল করলাম।

“এখানে সকল সুবিধা একসঙ্গে পেয়ে আমি খুশি।”

ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, “সার্কেল অফিসে আমি ছুটির দিনে কখনোই কর দিতে পারবে না। কিন্তু এখানে পারছি। তাই আমি মেলায় এসে দাখিল করলাম। এখানে আমি সংশ্লিষ্ট যত ধরনের তথ্য চাই, সেগুলো পাই।”

চতুর্থ দিনে আদায় ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ

আয়কর মেলার চতুর্থ দিন শুক্রবার মোট ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার টাকার বেশি আয়কর আদায় হয়েছে।এই অংক গত বছর মেলার একই দিনের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।

এদিন রিটার্ন দাখিল করেছেন ৭৫ হাজার ৭৩৬ জন। এ সংখ্যা আগের বছরের চতুর্থ দিনের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি।

মোট সেবা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬ জন। আগের বছরের মেলার চতুর্থ দিনের তুলনায় এই সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেশি।

নতুন ই-টিআইএন দাখিল করেছেন ৩ হাজার ৬৫১ জন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২০ শতাংশ বেশি।

এদিকে সার্বিকভাবে আয়কর মেলায় চতুর্থ দিন পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৬৭ কোটি টাকার বেশি কর আদায় হয়েছে। রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় ৬ লাখ ৬১ হাজারের বেশি করদাতা। কর সংক্রান্ত সেবা নিয়েছেন প্রায় ৯ লাখ মানুষ।

দেশের আটটি বিভাগ, ৫১টি জেলা এবং ১৮টি উপজেলাসহ মোট ৭৭টি স্পটে আয়কর মেলা চলছে।

মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইন গ্রহণ (নতুন ও পুরাতন), ই-পেমেন্ট, ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে।

মেলায় আসা মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় করদাতাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজধানীর টিএসসি, রামপুরা, বেইলি রোড, মতিঝিল, মিরপুর ও উত্তরা থেকে ১৫টি শাটল বাস নিয়োজিত রয়েছে।