এলএনজি লাইন সচলে গ্যাস সঙ্কট কাটছে

গত কয়েক দিনের টানা প্রচেষ্টায় মহেশখালী উপকূল থেকে সমুদ্রের তলদেশ হয়ে আসা ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ লাইনের ক্রুটি সারাতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2018, 04:23 PM
Updated : 15 Nov 2018, 04:23 PM

ফলে সারা দেশে শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকদের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আগের মতো স্বাভাবিক গতিতে গ্যাস আসা শুরু করবে বলে জানিয়েছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)  কর্তৃপক্ষ।

১২ দিনের গ্যাস সঙ্কট কাটিয়ে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে জানায় বিতরণকারী সংস্থাগুলো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরপিজিসিএলের এলএনজি শাখার মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকৌশলীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সকাল ১০টা থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “গত ৩ নভেম্বর সরবরাহ লাইনে সর্বোচ্চ ৩৩০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হত। আজ প্রথম দিনে প্রায় ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস যাচ্ছে।

“আগের অবস্থায় ফিরতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।”

জিটিসিএল ও পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, শেভরন, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, তাল্লো গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

সারা দেশে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও তা কখনোই পূরণ করা যায় না।

তবে অগাস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও ৩০-৩৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর সঙ্কট অনেকটাই কাটতে শুরু করেছিল।

গত ৩ নভেম্বর মহেশখালী দ্বীপের কাছে সমুদ্র তলদেশে এলএনজি সরবরাহ লাইনের একটি বাল্বে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ফিরে আসে গ্যাস সঙ্কট।

প্রথম সপ্তাহে দিনের অধিকাংশ সময় ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমতে থাকে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েকটি সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আবাসিকে সরবরাহ স্বাভাবিক করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট এবং শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট রিসাইকেল ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্টে সরবরাহ কমাতে বাধ্য হয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।

তিতাস গ্যাসের পরিচালন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন ২০০ এমএমসিএফ গ্যাস কম পাচ্ছিল তিতাস। ফলে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।”

সকাল থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত হওয়ায় এখন সার কারখানাগুলো চালু করা যাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

“আর শীতকাল হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখা নিয়ে খুব বেশি একটা উদ্বেগ নেই।”

কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা লোড ম্যানেজমেন্ট করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস অক্ষুণ্ন রেখেছি। কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘোড়াশাল, পলাশ ও যমুনা সার কারখানাতেও গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে। এই তিনটি সার কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৮০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।”

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার বলেন, “গ্যাস সঙ্কট দেখা দেওয়ার পর শিকলবাহা ২৫০ মেগাওয়াট ও শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছিল। এভাবে সরবরাহে সমন্বয় করা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

কেজিডিসিএলের আওতাধীন এলাকায় ৩৮ কোটি ঘনফুট থেকে ৩৯ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ৩ নভেম্বরের পর থেকে গ্রিড লাইন থেকে আসছিল মাত্র ২৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

আরও খবর