করদাতা বেড়েছে, বাড়াতে হবে আরও: মুহিত

জনগণকে কর দিতে উৎসাহিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়োজনে সারা দেশের বিভিন্ন কর অঞ্চলে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 08:53 AM
Updated : 13 Nov 2018, 08:55 AM

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রমনায় অফিসার্স ক্লাব আঙ্গিনায় এ মেলার উদ্বোধন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “এক সময় কর দিতে মানুষের অনীহা ছিল। কিন্তু এখন অসংখ্য যুবক এসে মেলায় কর দিয়ে যাচ্ছে।”

বর্তমানে সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের আয়কর সনাক্তকারী নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। তাদের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ২০ লাখ। আগামী দুই বছরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করার পাশাপাশি ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছে এনবিআর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় দেশে মাত্র সাত লাখ করদাতার কাছ থেকে আয়কর আদায় করা যেত। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে ৩০ লাখের বেশি হয়েছে।

“আমি কালকেই দেখলাম এখন বিভিন্নভাবে প্রায় এক কোটি মানুষ কর দেয়। অনেক ধরনের কর আছে, সবগুলো ধরলে এক কোটি মানুষ আজকে কর দেয়। এটা যথেষ্ট কৃতিত্বের বিষয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি করদাতা।

বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার আয়কর মেলার প্রথমদিনে করদাতাদের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার আয়কর মেলায় করদাতারা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“তবে আমাদের উন্নয়ন যেভাবে ধাবিত হচ্ছে, তাতে এক কোটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। এই এক কোটির সঙ্গে আরও কয়েক কোটি এখানে যুক্ত হওয়া উচিত “

মুহিত দাবি করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন সেবা বেড়েছে, মানুষের জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে বলেই জনগণ কর দিচ্ছে।

“এখন বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় আপনি ইচ্ছা করলে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে পারেন। এই সুযোগ ৩০ বছর আগেও ছিল না। এর ফলে অর্থনীতির গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং মানুষের মধ্যে বৈষম্য অনেক কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ বৈষম্য এখনো আছে, কিন্তু সেটা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময় দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ। তা এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।

“অর্থাৎ সকলের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ২২ শতাংশও কম নয়। ২২ শতাংশ মানে প্রায় ৩ কোটি মানুষ। এই তিন কোটি মানুষকে এখন উপরে ওঠাতে হবে। সেটাই এখন আমাদের জাতীয় লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশে আয়কর দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, কিন্তু তা এখনও জিডিপির ১০ শতাংশের কম। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই হার ১৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা গতবারের মতই আছে। যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না।

কোনো ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য তার করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা করে বাড়বে। অর্থাৎ, কোনো করদাতার একজন প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে তার করমুক্ত আয়সীমা হবে তিন লাখ টাকা।

করদাতা

করমুক্ত আয়সীমা (টাকা)

সাধারণ করদাতা

২ লাখ ৫০ হাজার

নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতা

৩ লাখ

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা

৪ লাখ

গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা

৪ লাখ ২৫ হাজার

কার জন্য কেমন কর

মোট আয়

কর হার

প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর

শূন্য

পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর

১০ শতাংশ

পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর

১৫ শতাংশ

পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর

২০ শতাংশ

পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর

২৫ শতাংশ

অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর

৩০ শতাংশ

আয়কর ও মুনাফার উপর কর বাবদ চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৭১৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ঢাকাসহ সাত বিভাগীয় শহরে আয়কর মেলা চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া সব জেলা শহরে চার দিন এবং ৩২টি উপজেলায় দুই দিন মেলা হবে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ৭২টি ‘গ্রোথ সেন্টারে’ এক দিন ভ্রাম্যমাণ মেলা হবে।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলায় করদাতা, সম্ভাব্য করদাতা ও ভবিষ্যতের করদাতাদের জন্য ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রিটার্ন গ্রহণ, কর পরিশোধ এবং কর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।