লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2018, 01:26 PM
Updated : 12 Nov 2018, 01:36 PM

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

তবে জাতীয় নির্বাচনের সময় আমদানির গতি কিছুটা ‘ধীর’ থাকে বলে এবার এই ঘাটতি গত অর্থবছরের মত ১০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে না বলে ধারণা করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে (বিওপি) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৮১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ৯৭৮ কোটি ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ।

এবার জুলাই-অগাস্ট সময়ে বিওপিতে ঘাটতি ছিল মাত্র ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা ১৩৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

বাণিজ্য ঘাটতি ৪ বিলিয়ন ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ (৩.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৬৫ কোটি ডলার।

আর পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল।

>> ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর  সময়ে ১ হাজার ৩৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৭৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

>> এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।

>> তবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি কমে ৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ১০৫ কোটি ডলার ছিল।

তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-অগাস্ট) সরকারের আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর  সময়ে যেখানে কোটি ৭৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার একই সময়ে সেই উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছিল।চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৭২ কোটি ডলার।এ হিসাবে এই দুই মাসে এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ২৫ শতাংশের বেশি। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি ততোটা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের কারণে আমদানির গতি শ্লথ থাকবে।”

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শথাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানির ঋণপত্র (এলসি) কমেছে ৭৫ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি কমেছে ৮ শতাংশ।